মোঃ রাজন আহ্ম্মেদ,ধামরাই প্রতিনিধি
দেশের রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গরুর মাংসের দাম কমলেও কমেনি ধামরাই উপজেলার কোন বাজারেই। গরু ও খাসীর মাংসের দাম কমানোর কোন উদ্যোগ নেই ধামরাই উপজেলা প্রশাসন ও ধামরাই পৌরসভা প্রশাসনের। প্রশাসন যেখানে নিরব, সেখানে ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরীফভাগ এলাকার ৪ বন্ধু বাজার মূল্যের চেয়ে কমে গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন গরুর মাংস।
৪ বন্ধু টুটুল, রিপন, রুবেল ও রাকিবুল পেশায় তারা কেউ কসাই নন। টুটুল রেন্ট-এ-কার ব্যবসা করেন, রিপন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র, রুবেল করেন পোল্ট্রি মুরগীর ব্যবসা এবং রাকিবুল পেশায় একজন প্যারামেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তাদের সকলের বাড়ি ধামরাই উপজেলার ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরীফভাগ গ্রামে।
সারাদেশে গরুর মাংসের দাম কমলেও ধামরাইয়ে মাংসের দাম না কমায় ৪ বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেন নিজেরাই গরু কিনে বিক্রি করবেন ৬৩০ টাকা দরে। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ, ০৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারাদিন মাইকিং করেন ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরীফভাগ বাজারে শুক্রবার ভোরে ৬৩০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করা হবে। পরদিন শুক্রবার এই ডাকে সারা মেলে খুব, একদিনেই বিক্রি করেন চারটি গরু। এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ কম দামে মাংস পেয়েছেন আর তাদের মুনাফাও হয়েছে আশানুরূপ।
সরেজমিনে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) ভোর ৬ টার দিকে শরীফভাগ বাজারের মোল্লা মার্কেটের সামনে গেলে দেখা যায়, একটি গরু বিক্রি শেষ করে আরেকটি গরুর মাংস বিক্রি চলছে। পাশেই বাঁধা আছে আরোও দুটি ষাঁড়। বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জেনে বেশ ভীড় রয়েছে সেখানে। আবার বিয়ে বাড়ির জন্য মাংস নিতে এসেছেন ভাড়ারিয়া গ্রামের শাকিল এবং ধামরাই পৌরসভা এলাকার ভাড়াটিয়া মিনহাজ।
মাংস নিতে আসা এক নারী ক্রেতা বলেন, আমি এক কেজি মাংস নিতে এসেছি, পৌরসভার বাজারের থেকে এখানে কেজিতে ১২০ টাকা কম। ধামরাই পৌরসভার বাজারে ৭৫০ টাকা রাখে আবার কখনও ৭২০ টাকা রাখে। এখানে কম পাওয়াতে আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।
পাঞ্জাবী টুপি পড়া ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বলেন, দাম কম তাই ভীড় মেলা বেশি। ফজরের নামাজ পড়ে আইছি এখনও সিরিয়াল পাই নাই। কমে পাওন যাই হুইনা আইছি দেখি ভাগ্যে জোটে কি না। তয় এরা কমে বেচতাছে আল্লাহ্ এগোর ভালা করুক।
শরীফভাগ বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, আমি বাজারে মুরগী বিক্রি করি আমার পাশেই গরুর মাংসের দোকান সেখানে ৭৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি হয়। অনেকেই আমার দোকানে মুরগী নিতে এসে আক্ষেপ করে বলেন, দাম যদি একটু কম থাকতো তাইলে গরুর মাংস নিতে পারতাম। তাদের এরকম কথা শুনে বন্ধুদের সাথে আলাপ করি যে সারা দেশে যখন দাম কমছে তাহলে আমরাও পারবো কম দামে বিক্রি করতে। এরপর বৃহস্পতিবার মাইকিং করে শুক্রবার সকালে মাংস বিক্রি শুরু করি। আমরা ব্যপক সারা পেয়েছি এবং আমাদের এই উদ্যোগের কারনে এখন অনেক দোকানে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছে।
টুটুল বলেন, মূলত কসাইখানার দাম কমানোর জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা পেশাদার মাংস ব্যবসায়ী নই আমরা যদি একটা গরুতে আশানুরূপ মুনাফা পেতে পারি তাহলে পেশাদার মাংস ব্যবসায়ীরা আমাদের তুলনায় বেশি লাভ করতে পারবে। আমরা চাই আমাদের দেখে ধামরাই উপজেলার মাংস ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে মাংস বিক্রি করুক যাতে সাধারণ মানুষ মাঝে মধ্যে মাংস কিনে খেতে পারে।
মাংসের দাম কমানোর ব্যাপারে ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার ধামরাই প্রতিনিধি বলেন, আমি একাধিকবার পৌর প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছি সারা দেশে দাম কমলেও আমাদের ধামরাইয়ে মাংসের দাম কমছে না কেন? তারা বলেছেন তারা ব্যবস্থা নিবেন কিন্তু গত দুই সপ্তাহেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।