ঢাকা অফিস:
প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলেও বিদেশে যেতে তাঁদেরই পাসপোর্ট থেকে ইমিগ্রেশন- সব জায়গায় হয়রানি সইতে হয়। বিদেশে পা রেখেও নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এ সময় বিচার দূরে থাক, নিজ দেশের দূতাবাস থেকেও কোনো সহযোগিতা মেলে না। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সময় সরকারকে অধিকার বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি দূতাবাসে কর্মরতদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সমকালের সভাকক্ষে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) ও মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়া (আইএমএফ) আয়োজিত ‘অভিবাসীকর্মীর সুবিচার প্রাপ্তি :জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা।
সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে এবং রামরুর নির্বাহী পরিচালক ড. সি আর আবরারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, পার্লামেন্টারি ককাস অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ার ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি এমপি, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব তৌহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ব্র্যাক মাইগ্রেশনের প্রধান শরিফুল হাসান প্রমুখ।
সভায় নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে মালয়েশিয়ার শ্রমিক নির্যাতন ছিল সবচেয়ে আলোচিত। সেই সময়ের পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থা দেখতে দেশ থেকে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাই। প্রতিদিন ৪-৫ হাজার শ্রমিককে সেবা নিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আসতে দেখেছি। কিন্তু দূতাবাস কোনো সহযোগিতা করেনি। সেখানকার দায়িত্বশীলরা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি।’
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রবাসী কর্মীরা নির্যাতন ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মামলা করলেও সুবিচার পাচ্ছেন না। প্রবাসীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে এ-সংক্রান্ত কাজ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হাতে নিতে হবে। অন্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আলাদা জুডিশিয়াল ব্যবস্থা করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, ‘১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পর কৃষকরা কৃষি যান্ত্রিকতার দিকে ঝুঁকলেও তাঁদের এসব কেনার সামর্থ্য ছিল না। এ সময় কৃষকের সন্তানরা মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। তাঁদের উপার্জনের অর্থে কেনা হয় সেচসহ কৃষিযন্ত্র। সরকার ও এনজিও দাবি করে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় অবদান তাদের। কিন্তু এ অর্জনের অন্যতম দাবিদার আমাদের প্রবাসীরা। যে সম্মান ও মর্যাদা প্রবাসীদের দেওয়া দরকার, তা আমরা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি।’