মোঃজিলহাজ বাবু ,জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, আওয়ামী লীগকে খেলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ কাউকে হত্যা করে, ঝটিকা মিছিল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে ক্ষমতায় আসেনি। আমরা বিএনপির দয়ায় ক্ষমতায় আসিনি। দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা জনগণের আস্থা অর্জনে বিশ্বাসী।
সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র লিটন বলেন, শুনতে পাচ্ছি, সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিএনপি মাঠে নামবে ও তাদের অবস্থান জানান দেবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত থাকবেন। আপনারা যে কোনো অপকর্ম, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকবেন। এসবের দাঁতভাঙা জবাব দেবেন। সম্প্রতি আয়নার ঘর নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত কিছু সেনা সদস্য নানারকম কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করছেন ফেসবুকে। তারা যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তা অত্যন্ত জঘন্য। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও যেকোনো ভালো জিনিস প্রচার ও এসব মিথ্যা কাল্পনিক কাহিনীকে রুখে দিতে ফেসবুক ব্যবহার করবেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকসহ তার পুরো পরিবারকে শহিদ করে স্বাধীনতা বিরোধীরা। বিএনপির শাসনামলে ২১ আগস্টের দিন মঞ্চের ওপরে ভাষণ দেওয়ার সময় বোমা হামলা করা হয়। রক্তাক্ত করা হয়েছে এই মাসটি। এই মাসেই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশর ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। সবকিছুই করেছে বাংলাদেশিরা। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার আশঙ্কার কথা জানানো হয়। তখন জাতির জনক বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। তিনি সেসময় বলেছিলেন, পাকিস্তানের কারাগারে আমি ৯ মাস কাটিয়েছি, তারা আমাকে মারতে পারেনি। তাহলে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এতকিছু করেও বাঙালিরা আমাকে কেমনে মারবে?
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জিয়াউর রহমান জানতেন, সেসময়ই জাতির জনককে সরিয়ে ফেলার উপযুক্ত সময়। অথচ সেনাবাহিনীতে বঙ্গবন্ধুই তাকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। জিয়া কোরআন শরিফে হাত রেখে দেশের শান্তি রক্ষা করতে শপথ নিয়েছিলেন। অথচ তা পালন করেননি। সপরিবারে জাতির জনককে হত্যাকারীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হাইজ্যাক করতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেননি। শুধুমাত্র জিয়ার কারণেই দেশের জনগণ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে পারেনি।
মেয়র লিটন বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জাতির জনককে সপরিবারের যেমনভাবে হত্যা করা হয়েছিল, জিয়ারও পরিণতি একই হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হাতেই তাকে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পরও দেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তার পথ ধরে এরশাদ, খালেদা জিয়াও এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ২০০১ সালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানো হয়। জোরপূর্বক জয় ছিনতাই করে নেওয়া হয়। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি এখনো স্বপ্ন দেখে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা দখল করবে। ক্ষমতা দখলের পর আবার হাওয়া ভবন হবে, অনিয়ম-দুর্নীতি করবে, নিয়োগ বাণিজ্য করবে। তবে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এর কোনো সুযোগ নেই। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রের মতোই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শোক সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী কামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের সঞ্চালনায় শোক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ রুহুল আমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান প্রমুখ।