আইনপ্রণেতা তিনি। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের। অথচ নিজেই নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না। স্ত্রীকে পৌর মেয়র বানাতে মরিয়া সংসদ সদস্য (এমপি) এবিএম আনিছুজ্জামান মসজিদে, ধর্মীয় সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন। এমনকি হুমকি দিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত দিয়েছেন একজন প্রার্থী। অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সদস্য হওয়ার পরই তিনি এলাকায় বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ নেতাকর্মীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক নেই। এর মধ্যেই এবার স্ত্রী শামীমা আক্তারকে ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য পৌরসভার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারেন না। তিনি যদি ওই নির্বাচনী এলাকার ভোটার হন, তাহলে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আমি দেখেছি এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে পাঠিয়ে দিয়েছি। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমপির এমন আচরণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এ পদক্ষেপকে স্থানীয় রাজনীতিতে পারিবারিককরণ হিসেবেই দেখছেন তারা। এতে দলের যোগ্য অন্য নেতারা বঞ্চিত হবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সাধারণ ভোটাররা বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তার স্ত্রীর পক্ষে কাজ করতে রাজি না হলে তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আনিছুজ্জামান তার স্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনকেও নিয়মিত হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ভোটার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এমপি আনিছুজ্জামানের তৎপরতা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তরায়। অভিযোগ রয়েছে, কয়েক দিন আগে মেয়র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের নির্বাচনী অফিসে এমপির ছোট ভাই আরিফ দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটাসহ প্রায় শখানেক গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে উপস্থিত হয়ে গালাগাল করে হুমকি দেন। চলে যাওয়ার সময় আমিনুলের নির্বাচনী অফিসকক্ষটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে ওই অফিস দখল করে এমপিপত্নীর নির্বাচনী প্রচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এসব বিষয়ে এমপি আনিছুজ্জামানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। তাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জুয়েল আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দুয়েক দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
সূত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ