শহিদুল ইসলাম, সাহ-সম্পাদক: ফেনীর পরশুরাম উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এই দিনে (৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩) সাদ বিন কাদের চৌধুরীর জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ব্যবসায়ী আর মা গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সাদ সবার ছোট। সবাই পেশাগতভাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
নিজ এলাকায় চান গাজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন সাদ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
১৯৭৩ সালে সাদের নানা মহাকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। মহকুমা থেকে ফেনী জেলা হলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৯৪ সালে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী সাদ দিন কাদেরকে আদর করে কোলে নিয়েছিলেন।
কথায় কথায় জানা গেলো, পারিবারিক সূত্রেই সাদের রক্তে বইছে রাজনীতির ধারা। বাবা ছিলেন পরশুরাম উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৯৬ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে নানুর পরিবারের সবাই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
সাদের বাবা ব্যবসা করতেন। তার তিন চাচাও ব্যবসায়ী। ছোটবেলায় পরিবারে মা-বাবা, চাচা, মামা-খালা, নানা মিলে যখন গল্প করতেন, তখন সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন, তাঁর কাজ, নীতি নিয়ে আলোচনা করতেন। এসব আলোচনা সাদের কিশোর মনে দোলা দিত। এসএসসি পাস করার পর পরিবারের সবাই ঢাকায় চলে আসেন। সেও নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়। নটরডেম কলেজে ছাত্ররাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে উঠেন। ক্যাম্পাসে ঢুকেই ঢাবিতে যারা রাজনীতি করতেন তাদের সাথে মিশতেন আড্ডা দিতেন। সিনিয়রদের কাছে রাজনীতি করার আগ্রহের কথা জানালে কার্যক্রমে যুক্ত হতে বলেন। এভাবে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পথচলা। পরে তাকে ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই দায়িত্ব খুব নিষ্ঠার সাথে পালন করে ছিলেন।
২০১৯ সালে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর পাঁচজন পলাতক খুনির প্রতিকী ফাঁসির কর্মসূচি হাতে নেন অদম্য এই ছাত্রনেতা। উদ্দেশ্য পাঁচজন খুনির প্রতিকী ফাঁসির মধ্য দিয়ে একটা মেসেজ দিতে চান যে, তাদের ফাঁসি হওয়া প্রয়োজন। পরে ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল পলাতক খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। তার ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে সাদ কয়েক বন্ধু মিলে চালু করেন ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ যখন শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন, এদের মধ্যে অনেকের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তারা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। মানুষের এমন বিপদে পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা শুরু করে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।
অত্যন্ত আন্তরিক ব্যবহার, দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা, সাংগঠনিক কাজের দক্ষতা ও নেতৃত্বের কৌশলের গুণে অল্পসময়ের মধ্যে সবার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তরুণ এই ছাত্রনেতা। ফলে তাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সাদ বিন কাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে দায়িত্ব এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন।
ছাত্ররাজনীতির এই পথচলায় সংগঠনের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতাদের কাছ থেকে যে আন্তরিক সহযোগিতা, স্নেহ, ভালোবাসা ও মেন্টাল সাপোর্ট পেয়েছেন সেটা তার অন্যতম অর্জন বলে মনে করেন তরুণ এই ছাত্রনেতা।