আমি প্রান্তজন নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে লেখালেখি করেছি। অনেক সময় লেখার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করেছি। কাঁদামাটি থেকে বেড়ে ওঠা আমি সমাজের অনেক বাস্তবতাকে শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমি জেলে পরিবারের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান ছিলাম। বহুঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে জীবনের এই প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। জীবনে স্বপ্ন ছিলো প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হবো, সেখান থেকে হয়ে গেছি কলেজের শিক্ষক। পেশার পাশাপাশি লেখক হয়েছি।”- হরিশংকর জলদাস
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ আয়োজিত সাহিত্য আড্ডায় জীবনের নানা গল্প বলছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। সাহিত্য আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে আড্ডার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। সাহিত্য আড্ডায় বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর নূর উদ্দীন আহমেদ, কুষ্টিয়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইনস্ট্রাক্টর রেজাউল করিম মিন্টু, পরিবেশবিদ ও লেখক গৌতম কুমার রায়। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম হাসিবুর রশিদ তামিম। সাহিত্য আড্ডার উপস্থাপনা করেন গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমোশন অফিসার ইমাম মেহেদী। সাহিত্য আড্ডা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস ও তার সহধর্মিনীকে উত্তোরীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি সুভেনির দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। আড্ডা শেষে তিনি পুরো ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা পরিদর্শন বহিতে লিপিবদ্ধ করেন। সবশেষে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের আয়োজনে সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠান উপভোগ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যে জল বা পানি কেন্দ্রিক মানুষের জীবনের সংগ্রাম এবং শোষণ বোধ করি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অদ্বৈত মল্লবর্মণের পরে উনিই এতটা গভীরে গিয়ে লিখেছেন।
এক মৎস্যজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার শিক্ষা গ্রহণকে তার নিজের কমিউনিটির মানুষই পজেটিভলি নিতো না। সমুদ্র এবং মাছ আহরণ যাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তাদের জন্য শিক্ষা বিলাসিতা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে উনি শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন যেখানে তার ক্যাডার চয়েস ফর্মে কেবলমাত্র একটিই চয়েস দেয়া ছিল যেটা “জেনারেল এজুকেশন ক্যাডার”। চাকরিতে যোগদানের পরেও উনি উনার ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন! এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের বিষয়ে সবচেয়ে অবাক করা তথ্যটি হচ্ছে উনার ৫৫বছর বয়সে সাহিত্য রচনা শুরু করেন এবং ১৫ বছরে ৬৯টি বই লেখেন! তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরের উপকন্ঠে এক জেলে পল্লীতে উনি বেড়ে উঠেছিলেন বলে জীবনের বিভিন্ন সময়ে উনাকে নিগৃহীত হতে হয়েছে এমনকি কর্মক্ষেত্রেও। যেটা তিনি প্রতিহিংসায় রুপ না দিয়ে সোনার শব্দে রুপান্তরিত করেছেন।