সংসদে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কথায় কথায় আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়। আর বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, তারা (আমেরিকা) যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে উত্থাপন করা প্রস্তাব এবং সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শুক্রবার জাতীয় সংসদে স্মারক বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে- তার গণতান্ত্রিক কোন অস্তিত্ব থাকবে না।অগণতান্ত্রিক ধারা। আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাবেদারি করে। পদলেহন করে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি সে দেশটি হচ্ছে গভর্মেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল।
আরও বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায় তখন কী আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিকটেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন?
বিভিন্ন দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকেও আমি বলি যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয়। আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তো আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যারাব স্প্রিং (আরব বসন্ত), ডেমোক্রেসি বলে বলে, সমস্ত ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা প্যাঁচে পড়ে গেছেন। যতদিন ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর ওপর চলছিল, ততদিন কিছু হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এখন সারা বিশ্বই আজকে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদেরকে এখন গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে। কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলছে। তাদের দেশের অবস্থাটা কী?
তিনি বলেন, আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যায়। বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে। শিক্ষকদের হত্যা করছে। শপিং মলে ঢুকে যাচ্ছে। হত্যা করছে। ক্লাবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা প্রতিনিয়ত, প্রতিদিনেরই ব্যাপার। কোনো না কোনো রাজ্যে অনবরত এই ঘটনা ঘটছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টে যারা হত্যা করেছে সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যত প্রেসিডেন্ট এসেছে সকলের কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রীর হত্যাকারী। এটা মানবতা লঙ্ঘনকারী। এদেরকে আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না। খুনিদেরকে লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে, বলেন তিনি।
এসময় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সরকার ও দেশের উন্নয়নে স্থিতিশীলতা দেওয়া সত্ত্বেও কতিপয় সংসদ সদস্য অনুচ্ছেদটির বিরোধিতা করায় তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, অনুচ্ছেদ ৭০ গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় ও জনগণের কাছে গণতন্ত্রের সুফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটিকে আরও শক্তিশালী করে। কিন্তু, আমাদের (সংসদ) সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন এই অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে। কারণ, এই অনুচ্ছেদের জন্য তারা ইচ্ছেমতো সরকার ভাঙা-গড়ার খেলা খেলতে পারছেন না।