কাজী মোঃআশিকুর রহমান আশুলিয়া প্রতিনিধি
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ ও দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, রিকশা-ভ্যান সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে ঢাকার আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিতে অবৈধ ইজিবাইক, রিকশা-ভ্যান। অদৃশ্য কারনে হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের রয়েছে নিরব ভুমিকা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা-ভ্যানের মধ্যে মোটর লাগিয়ে রাস্তায় চলছে। শুধু সামনের চাকায় ব্রেক, পেছনের চাকায় কোনো ব্রেক নেই বা ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। সেগুলো যখন ব্রেক করে যাত্রীসহ গাড়ি উল্টে যায়। এ ধরনের দৃশ্য হরহামেষা দেখা যায়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে গিয়ে এ চিত্র চোখে পড়ে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক, বাইপাইল-আশুলিয়া মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট বাড়ছে জনদুর্ভোগ। পকেট ভারি করছেন পুলিশ। প্রকাশ্যে হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়ে হরহামেশা এসব অবৈধ রিকশা অটোরিকশা চলাচল করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে দাবী সচেতন মহলের। তবে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো রিকশা অটোরিকশা ধরলেও অর্থের বিনিময়ে তা ছেড়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে প্রায় প্রতিদিনই বাইপাইল, জামগড়া এবং ইপিজেড ট্রাফিক বক্স এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা অটোরিকশা ধরা হয়। এসব রিকশা অটোরিকশা ধরা হলেও চালকদের কাছ থেকে র্যাকার বিল রেখে আবার ছেড়েও দেয়া হয়। আর হাইওয়ে পুলিশ বলছে এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আটকসহ মামলা করা হচ্ছে তবে সাভার হাইওয়ে পুলিশ বলছে তাদের লোকবলের অভাব। এরপরও তারা এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
মহাসড়কের এসব এলাকায় শত শত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল করলেও ট্রাফিক পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ তাদের কিছুই বলছে না অদৃশ্য কারনে। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, মাসিক মাসোয়ারার মাধ্যমে চলে আসছে মহাসড়ক গুলোতে অবাধে চলাচলরত অবৈধ ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যান । যে সকল চালকরা মাসিক মাসোয়া দিতে না চায় তাদের বাহন আটক করে জরিমানা করা হয় । এই অত্যাচারের কারনে চালকরা মাসিক মাসোয়ারায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে মহাসড়ক গুলোতে অবাধে বাহন গুলো চালিয়ে আসছে। অবাদে মহাসড়ক দিয়ে নিষিদ্ধ এসব বাহন চলাচলের ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণেই বেটারি চালিত ইজিবাইক, রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশাসহ তিন চাকার সকল যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাসড়ক সহ বিভিন্ন লিংক সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন। এমনকি মানছেনা উচ্চ আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা। এসব এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কে বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এসব দূর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন আবার অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। সরকারের এ সিদ্ধান্ত এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে তারা সাধুবাদ জানান। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে মহাসড়কে চলছেই এসব রিকশা-ভ্যান। তবে পুলিশ প্রশাসন এব্যাপারে কঠোর ভুমিকা পালন করলে হয়তো মহাসড়কে চলাচল বন্ধ হবে অবৈধ বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা।
আশুলিয়ার জিরানী বাজারে অটোরিকশা চালক সেন্টু জানায়, ঈদের আগে তাকে চেতনা নাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুইজন। তিন চার দিন পরে বাড়িতে আসি এবং খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। সুস্থ হয়ে আবার মাসিক কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনেছি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে চালাতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু মহাসড়কে উঠলেই মাঝেমধ্যেই এক হাজার আবার কোন কোন সময় দুই হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই মহাসড়কে আসি। তবে সকালের দিকে পুলিশ তেমন কিছু বলে না। তাই সকালেই অটোরিকশা নিয়ে মহাসড়কে এসেছি। সকালে যাত্রীও বেশী পাওয়া যায়, আবার ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। তবে হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মধ্যে রিকশা জব্দ করে রাখে, কাউকে আবার মামলাও দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছে একাধিক রিকশা চালক। কত টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মামসু মিয়া জানায়,ধরলেই কখনও দুই হাজার, আবার কখনও এক হাজার টাকা দিলেই ছেড়ে দেয় তবে কখনো রশিদ দেয় আবার কখনও টাকার কোন রশিদ দেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবহণের এক চালক জানান, মহাসড়কে এসব অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-অটো রিকশার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস চালকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকরা বিব্রতবোধ করে। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের জোর নজরদারি থাকলে এসব বন্ধ হবে অচিরেই।
এব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আতিকুর রহমান জানান, মহাসড়কে বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি। থানার মধ্যেও আটক আছে অনেক। এছাড়া আমাদের লোকবল নাই, লোকবলের অভাব। তবে যতটুকু সম্বব চেষ্টা করছি।