কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে সেচ প্রকল্পের বিবাদকে কেন্দ্র করে মোরশেদ আলীকে হত্যা ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। নিহত মোরশেদ ইফতার পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার আকুতি করেও শেষ রক্ষা পাননি বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম ইউসুফ। আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব-৭-এর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী (৩৮) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব
গ্রেপ্তাররা হলেন- মাহমুদুল হক, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবদুল আজিজ ও নুরুল হক। আসামিরা ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর স্টেশন বাজারে ইফতারি কিনতে গিয়ে খুনের শিকার হন ওই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলী প্রকাশ মোরশেদ বলী (৪০)। মোরশেদ বলী এক দশক ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে প্রবাসজীবনের পর দুই বছর আগে গ্রামে ফেরেন। তিনি গ্রামে এসে মাছের ঘেরসহ ক্ষেত-খামার গড়ে তুলতে শুরু করেন। এলাকায় আসার পর থেকে পানি সেচ প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার মোহাম্মদুল হকের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সময় নিহত মোরশেদ বলী যখন চেরাংঘর স্টেশনের তরকারি দোকানের সামনে এসে কেনাকাটা করছিলেন, তখনই আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা আলাল এবং যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন গলিটি ঘিরে লোকজনের আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন। এ সময় দুজনই সমস্বরে বলতে থাকেন- ওপরের নির্দেশ আছে মোরশেদ বলীকে মেরে ফেলার জন্য। এমন হুঁশিয়ারির সঙ্গে সঙ্গেই মামলার এক নম্বর আসামি যুবলীগ নেতা আবদুল মালেক তার হাতের লম্বা কিরিচ নিয়ে প্রথমে মোরশেদের মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারেন। এরপর সৌদি আরব থেকে হত্যার মিশন নিয়ে আসা আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ হাতুড়ি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মোরশেদের অণ্ডকোষে বারবার আঘাত করেন।
ঘটনার অন্যতম প্রধান নায়ক আসামি মোহাম্মদুল হক এ পর্যায়ে ধারালো কিরিচ দিয়ে মোরশেদের ডান হাতের কবজিতে কোপ দিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর জাহাঙ্গীর আলম, মতিউল ইসলাম, ছৈয়দুল হক, হামিদুল হক, তাহেরুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মেম্বার আরিফুল্লাহ, আক্কাস, শাহিন, খোরশেদ আলম, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আলী ভাইয়ের ভাই মাহমুদুল করিম ও গ্রেপ্তার হওয়া দিদারুল আলম, আবদুল্লাহ, আবদুল আজিজ, আবদুল হাই, ওমর ফারুক, ইয়াছিন, সাইফুল ইসলাম, ওসমান, আজহারুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলামসহ অন্যরা ছোরা, লোহার রড দিয়ে মোরশেদকে উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে ঝাঁঝরা করে ফেলেন। এলাকার লোকজনের মতে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে সংঘবদ্ধ খুনির দল এলাকা ছাড়ে।
নিহত মোরশেদ বলীর ছোট ভাই ও মামলার বাদী শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, ‘স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এগারোজনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। তারাই আমাদের পরিবারের সেচ পাম্পটি দখলে নিয়ে কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছিল। এমনকি সিন্ডিকেট সদস্যরাই এলাকায় করছিলেন ভূমিদস্যুতাসহ যাবতীয় অপকর্ম। ’
তিনি বলেন, নিহত মোরশেদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি সিন্ডিকেটের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুনের শিকার হলেন। মামলার বাদী জাহেদ আলী জানান, সাবেক ইউপি মেম্বার ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদুল হক সেচ পাম্পটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তার চাচাতো ভাই এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল মালেকের মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে সিন্ডিকেটটি গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন।