কুয়েতে নানা অপরাধে যুক্ত ও অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের গ্রেপ্তারে গত দশদিন ধরে অভিযান পরিচালনা করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিশ্বনবী (সা.) কে অবমাননার জেরে স্থানীয় আইন উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিলের পর অভিযান আরও জোরদার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আর এতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি।
স্থানীয় গণমাধ্যম আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ দিন ধরে কুয়েতের জিলিব আল সুয়েখ, আব্বাসিয়া, ফরওয়ানিয়া, খাইতান, সুয়েখ, হাওয়াল্লি, মাহবুল্লাহসহ অভিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনের নাগরিক।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দেশের আবাসন আইন লঙ্ঘন, মাদক বেচাকেনা, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, জুয়া, ভিক্ষাবৃত্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে কুয়েত সরকার।
কুয়েতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশিরা ড্রাইভার, হাউস বয়, বাবুর্চি, ক্লিনিং ও সিকিউরিটিসহ অন্য কাজের ভিসা নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করে। কিন্তু অনেক কোম্পানি ঠিকভাবে বেতন পরিশোধ না করায় দেশটিতে থাকা-খাওয়া ও দেশে পরিবারের ভরণপোষণের দায়ে অন্যত্র কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশিরা। সেটা স্থানীয় আইনের লঙ্ঘন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, লোন করে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচে করে দালালের মাধ্যমে কুয়েত আসি। ৭৫ দিনার বেতনে একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বেতন না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে ডিউটি শেষে অন্য জায়গায় কাজের সন্ধান করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বছর শেষে বা কোম্পানির চুক্তি শেষে আকামা লাগাতে টাকা দিতে হচ্ছে। ভালো জাগায় ডিউটি নিতে কোম্পানির সুপারবাইজার ও ফোরম্যানদের ঘুষ দিতে হয়। যে বেতন পাই তাতে আমাদের নিজের ও পরিবারের খরচ বহন করতে কষ্ট হয়ে যায়। তাই আমার অনেকে কোম্পানির ডিউটি শেষে অন্য জাগায় কাজের সন্ধান করি। এতে ভাগ্য খারাপ হলে চেকে ধরা পড়ে নিজ দেশে ফেরত চলে যেতে হয়।’
দেশটিতে অবস্থানরত একাধিক বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘কোম্পানির সুপারবাইজার, ফোরম্যানদের অতিরিক্ত ঘুষ প্রদান, বকেয়া বেতন, আকামা সমস্যা ইত্যাদি হয়রানির কথা কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে কোম্পানি। সেই ভয়ে অনেকেই নিরবে এসব সহ্য করে আসছে।
এ বিষয়ে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কুয়েতের ফাহাহিল এলাকায় কিছু সংখ্যক প্রবাসী মুহাম্মদ (সা.)-এর সমর্থনে অবস্থান ও বিক্ষোভের আয়োজন করে। শনিবার স্থানীয় আরবি দৈনিক আল রাই পত্রিকায় অবস্থান ও বিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পত্রিকাটির খবরে উল্লেখ করা হয়, আইন লঙ্ঘন করায় প্রবাসীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং তারা পুনরায় যেন কুয়েতে প্রবেশ করতে না পারেন সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে প্রবাসীসহ সবাইকে যথাযথভাবে স্থানীয় আইন মেনে চলতে বলা হয়েছে।