সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা মামলা থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানেকে দায়মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু সৌদি যুবরাজ এখন সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিজের পদাধিকারবলেই এই মামলা থেকে দায়মুক্তির যোগ্য, এমন বিবেচনায় বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিখোঁজ হন খাশোগি। পরে জানা যায়, তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দারা প্রথম থেকেই বলছে, খাশোগিকে সৌদি এজেন্টদের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল, যা যুবরাজ সালমানের নির্দেশেই হয়েছিল।
অবশ্য শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ খাসোগি হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছেন যে এটি আমার নজরে হয়েছিল।
কিন্তু আদালতে পেশ করা এক নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন ভূমিকার কারণে দায়মুক্তি পান তিনি।
এদিকে যুবরাজের দায়মুক্তির ঘোষনার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খাশোগির বাগদত্তা ও তার খুনের মামলার বাদি হাতিজে চেঙ্গিস টুইটারে লিখেছেন, ‘আজ জামাল আবার মারা গেল’।
তিনি আরও একটি টুইটে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে, তবে আবারও অর্থের জয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, চেঙ্গিস ও খাশোগির প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার গোষ্ঠী ‘ডেমোক্র্যাসি ফর দ্য আরব ওয়াল্ড নাউ’ (ডন) এ খুনের জন্য সৌদি যুবরাজের কাছে অনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করেছিল।
অভিযোগে সৌদি যুবরাজ ও তার কর্মকর্তাদের অপহরণ, আটকে রাখা, মাদক প্রয়োগ ও নির্যাতন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সাংবাদিক ও গণতন্ত্রের সমর্থক খাশোগি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে যুবরাজের দায়মুক্তিতে তার সমর্থক ও বিশিষ্ট্যজনদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাও (ডন) এর নির্বাহী পরিচালক সারাহ লিয়াহ হুইটসন বলেন, বাইডেন প্রশাসন যুবরাজের দায়মুক্তির সুপারিশ করার জন্য এবং তাকে জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করার জন্য তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, এখন যেহেতু বাইডেন যুবরাজের দায়মুক্তির ঘোষণা করেছেন , আমরা আশা করতে পারি আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুবরাজের আক্রমণ আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে ‘গভীর বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
এছাড়াও লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেছেন, রাশিয়া এবং চীনের সাথে শক্তির প্রতিযোগিতার মধ্যে, সৌদির আরবের সহযোগিতা আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স