Tuesday , 30 April 2024
শিরোনাম

খোকসার শতবর্ষী জুবিলী ব্যাংকের অবসায়কের দায়িত্ব নিলেন সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
এ উপমহাদেশে নীল বিদ্রোহের পর পরই ইংরেজ শাসন আমলে ব্যবসা বিস্তার ও সম্প্রসারণ করতে কুষ্টিয়ার খোকসা অঞ্চলের মানুষ একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১৩ সালে খোকসার প্রাণকেন্দ্রে প্রমত্তা গড়াই নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠা পায় ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’। দীর্ঘ ১০৯ বছরের ঐতিহ্য দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে পুরোনো জুবিলী ব্যাংকের অফিসিয়াল লিকুইডিটর’ (অবসায়ক) হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৩০ জুন, বৃহষ্পতিবার সরেজমিন খোকসা জুবিলী ব্যাংকে এসে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশ অনুসারে, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সম্মানী পাবেন। তার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারিয়া হককে অতিরিক্ত লিক্যুইডিটর হিসেবে নিয়োগ এবং তার জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির এজিএম তথা বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়া এবং ব্যাংকটির অন্যতম শেয়ার মালিক এমবিআই মুন্সী নিজেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান দাবি করেন। পরে এ নিয়ে ২০১২ সালে মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

ওই মামলাকে কেন্দ্র করে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে হাইকোর্ট দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ব্যাংকিং আইন দ্বারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় ছিলেন। তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক, কর্নেল (অব.) রশীদ এবং মেজর (অব.) বজলুল হুদা। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তথ্য লুকানোরও অভিযোগ ওঠে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসাবে ব্যাংকটির দায়িত্ব দেন। কিন্তু আদালতের দেওয়া ছয় মাস সময়ের মধ্যে আদেশটি বাস্তবায়ন না করতে পারায় আদালতের কাছে পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন জানানো হয়।

জুবিলী ব্যাংকটি অবসায়নের নির্দেশ দিয়ে পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত কেন এতদিনেও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রতিবেদন চান।

এছাড়া ১৯৮৪ সালের ২৫ জুনের পর থেকে এ পর্যন্ত জুবিলী ব্যাংকের কার্যক্রম মনিটরিং করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, পরিচালক, ম্যানেজারসহ দায়িত্বরতদের শোকজ করেছেন। পাশাপাশি আদালত আরজেএসসির তালিকা থেকে জুবিলী ব্যাংকের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্ট এ আদেশের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদপ্রেক্ষিতে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি বাতিল করা হলো।’ ধীরে ধীরে ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। কর্মকর্তার সংখ্যা সাত থেকে আটজন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন শাখা ম্যানেজার নিজেই। তার বেতন ১৮ হাজার ও চেয়ারম্যানের বেতন ২৫ হাজার টাকা। সারা বাংলাদেশে ব্যাংকটির শাখা মাত্র একটি।

ভারত বর্ষের কোম্পানি আইন অনুসারে সোনা, গহনা ও জমি বন্ধকের বিনিময়ে ব্যবসা শুরু করে ব্যাংকটি। পরবর্তীতে মানুষের ব্যবহার্য্য মূল্যবান সামগ্রী বন্ধকী পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে মাত্র একটি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ১৯৮২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭০ বছর সমবায় ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবার পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান করে। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৭ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’। এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ব্যাংকটিতে অ-তফসিলি ব্যাংক ঘোষনা করে কার্যক্রম চালু রেখেছে। পরবর্তী সময় স্বর্ণ বন্ধকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষিদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় এই ব্যাংকটিকে। এটি দেশের অ-তফসিলি (নন-সিডিউল) পাঁচটি ব্যাংকের একটি।

ব্যাংকটির বর্তমানে আমানতকারী দুই হাজার এবং ঋণ নিয়েছে ৭০০ জন। ১৯৮২ সাল থেকে খুলনায় ব্যাংকটির আরেকটি শাখা থাকলেও ২০০০ সালের পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে যখন লাইসেন্স নেয়, তখন মিয়া আবদুর রশীদ নামে এক ব্যক্তি এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তার হাতে ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৫১ শতাংশ। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মৃত্যুর পরে তার নাতী ব্যারিস্টার এমবিআই মুন্সী ২০০২ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি আবারও এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান পুননির্বাচিত হন।

এ ব্যাংকটিতে দীর্ঘদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম.ডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন খোকসার বিশিষ্ট দানবীর, শিক্ষানুরাগী ও ব্যবসায়িক সাফল্য ব্যক্তিত্ব হাজী জালাল মিঞা এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পরিচালক (ডাইরেক্টর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন খোকসার আরেক গুনিজন জনাব মোন্তাজ আলী প্রামাণিক। ব্যাংকটির উন্নয়নে এ দুজনের অবদান অপরিসীম।

Check Also

দেশজুড়ে বৃষ্টির সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

দেশে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। এরমধ্যে কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। চুয়াডাঙ্গায় চলতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x