নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের ফলে গত দুসপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কায় সরকারপতন আন্দোলন চলছে। এই অস্থিরতার মধ্যেই গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন দেশটির সাবেক উপমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট গোতাবায় পাকসের চাচাতো বোন নিরুপমা রাজাপাকসে।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুবাইয়ের উদ্দেশে কলম্বো ত্যাগ করেন নিরুপমা। সর্বশেষ তাকে শ্রীলঙ্কার প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাটুনায়েকে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে দেখা গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দৈনিক সিলন টুডে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের চাচাত বোন নিরুপমা রাজাপাকসে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশটির পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন। করফাঁকি, দুর্নীতি ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত নিরুপমার নাম প্যান্ডোরা পেপার্সেও এসেছিল।
এদিকে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে গেছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।
বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত মাসে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান পড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।
বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। জনরোষ সামাল দিতে শনিবার দেশজুড়ে তিন দিনের কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।
কারফিউয়ের দ্বিতীয় দিন, রবিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ব্যাতীত ২৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন। একই দিন পদত্যাগ করেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও।
তারপর ০৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেন গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে এমপিরা। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ৪১ জন এমপি মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে আন্দোলনরত জনগণ এতে সন্তুষ্ট নন। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তার বড়ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দারও পদত্যাগ চাইছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট জাতীয় ঐক্যের সরকারে যোগ দেয়ার জন্য বিরোধী এমপিদের আহ্বান জানালেও তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, প্রেসিডেন্টসহ পুরো সরকারকেই পদত্যাগ করতে হবে।