সংক্রমণের উচ্চ হার সত্ত্বেও জার্মানিতে করোনা বিধিনিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। তবে ফেডারেল সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছে। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেছে বলে মনে করছে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ তবে সংক্রমণের হার এখনো মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে৷ বিগত সপ্তাহে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে এই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে৷ সংক্রমণের হার ধীরে হলেও কমতে থাকায় কিছুটা আশার আলো দেখছে জার্মানির রোগ প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠান৷
জার্মানিতে আপাতত করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন বিএ.২ প্রজাতি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে৷ গত সপ্তাহে ৭২ শতাংশের তুলনায় চলতি সপ্তাহে ৮১ শতাংশ নমুনায় এই ভেরিয়েন্ট শনাক্ত করা গেছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের সূত্র অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সিদের মধ্যে সংক্রমণের হার কমে এলেও ৬০ থেকে ৮৫ বছরের মানুষ আরও বেশি করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন৷ তাই ৭০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের উদ্দেশ্যে করোনা টিকার দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ নেবার আহ্বান জানানো হচ্ছে৷
করোনা সংক্রমণের হার এখনো উচ্চ পর্যায়ে থাকলেও বিধিনিয়ম শিথিল করার পথে এগোচ্ছে জার্মানি৷ আগামী রবিবার থেকেই দেশজুড়ে বেশিরভাগ নিয়ম প্রত্যাহার করা হবে৷ তবে রাজ্য, আঞ্চলিক ও পৌর স্তরে প্রয়োজনে কিছু বিধিনিয়ম চালু রাখার সুযোগ থাকছে৷ এরই মধ্যে ফেডারেল সরকার করোনায় আক্রান্ত মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম প্রত্যাহার করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে৷ বর্তমানে সাত দিনের কোয়ারেন্টাইনের বদলে আক্রান্তরা ভবিষ্যতে মাত্র পাঁচ দিন ‘স্বেচ্ছায়’ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন বলে প্রস্তাব রেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ৷ সে ক্ষেত্রে পাঁচ দিন পর করোনা টেস্ট করালেই চলবে৷ তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে পাঁচ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের শেষে নেগেটিভ পিসিআর টেস্ট দেখানোর নিয়ম রাখতে চায় সরকার৷ ফেডারেল সরকারের এই সব প্রস্তাব নিয়ে এখনো ১৬টি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা হয়নি৷
জার্মানিতে বর্তমানে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে গড় সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার প্রায় ১,৫৮৬ ছুঁলেও করোনা সংক্রান্ত প্রায় সব বিধিনিয়ম শিথিল করার বিষয়টি বিতর্কের মুখে পড়েছে৷ সরকারের শরিক উদারপন্থি এফডিপি দলই এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে বলে সমালোচকরা ইঙ্গিত করছেন৷ সংক্রমণের উচ্চ হার সত্ত্বেও এমন পদক্ষেপের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন তাঁরা৷ বিশেষ করে বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরার নিয়ম প্রত্যাহার করলে সংক্রমণ হুহু করে বাড়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে৷
দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে করোনা সংকট মোকাবিলা করতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করছে জার্মানির ‘বিল্ড’ সংবাদপত্র৷ ১৮ বছরের বেশি সব মানুষের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ সংসদে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ায় সরকার পিছিয়ে এসেছে বলে বিল্ড নিজস্ব সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে৷ ফলে আপাতত ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের জন্য এমন আইনের খসড়া পেশ করার উদ্যোগ চলছে বলে ‘বিল্ড’ দাবি করছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সরাসরি সে বিষয়ে মন্তব্য না করলেও জানিয়েছেন, যে সরকার সংসদে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়ার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ আগামী সপ্তাহেই ভোটাভুটির সম্ভাবনা রয়েছে৷ শলৎস বিষয়টিকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে সংসদ সদস্যদের নিজস্ব বিবেক অনুযায়ী ভোটদানের পক্ষে সওয়াল করে আসছেন৷