১৯১২ সালে আইসবাগের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যাওয়া প্রমোদতরী টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে উৎসুক পর্যটকদের নিয়ে পানির নিচে অভিযানে যাওয়া ডুবোযান টাইটানের দুর্ঘটনায় আরোহীদের নিয়ে কথা বলেছেন বিখ্যাত টাইটানিক সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরন।
বিশ্ববিখ্যাত টাইটানিক সিনেমার পরিচালক বলেন, যা কিছু হয়েছে তা আমি হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছি। যখন ডুবোযানটির ইলেকট্রনিক্স, কমিউনিকেশন ব্যর্থ হয়েছে এবং একই সঙ্গে ট্র্যাকিং ট্রান্সপন্ডার ব্যর্থ হয়েছে- তখনই স্পষ্ট যে ডুবোযানটি আর নেই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টাইটানিক সিনেমা নির্মাণের কারণে বিষয়টি বোঝার জন্য মহাসাগরের তলদেশে ৩৩ বার গিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখে এসেছেন নির্মাতা ক্যামেরন।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী পাঁচ আরোহী নিখোঁজের খবর প্রকাশ্যে আসার সময়ই তাদের মৃত্যু হতে যাচ্ছে বলে নিজের ধারণার কথা জানিয়েছিলেন ক্যামেরন। তিনি বলেন, রোববার একটি নৌজাহাজে ছিলেন তিনি। টাইটান নিখোঁজ হওয়ার খবর সোমবারও জানতে পারেননি তিনি। তবে পরে যখন জানতে পারলেন ডুবোযানটি যোগাযোগ ও নিজের গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে, তখনই ধারণা করেছিলেন দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
পরিচালক ক্যামেরন বলেন, দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। যেখানে মানুষ শুধুই ছোটাছুটি করছে এবং অক্সিজেন নিয়ে চিৎকার করছে। আমি জানতাম ডুবোযানটি চূড়ান্ত গভীরতা ও অবস্থানের নিচে ঠেকেছিল। ডুবোযানটি সেই জায়গায়ই পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার যখন রিমোট কন্ট্রোল ডুবোযান পাঠানো হলো, উদ্ধার অভিযানে নিযুক্তরা সম্ভবত কয়েক মিনিট কিংবা ঘণ্টার মধ্যেই সেটি পেয়ে গেল।
এদিকে, সমুদ্রের তলদশে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসস্তূপ পাওয়া গেছে। চারদিন সমুদ্রের তলদেশে তল্লাশি অভিযানের পর বৃহস্পতিবার (২২ জুন) উদ্ধারকারীরা জানান- ডুবোযানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার প্রথম টাইটানের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ওশানগেট এক্সপেডিশন্স ডুবোযানে থাকা পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। প্রথমে ডুবোযানটি বিস্ফোরণে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড।
একই দিন দেশটির কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা রিয়ার এডমিরাল জন মাগার বলেন, ডুবোযানের ধ্বংসস্তূপের পাওয়া চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট বিপর্যয়কর বিস্ফোরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে পানির নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখাতে গত রোববার (১৮ জুন) রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয় সাবমেরিন টাইটান। ডুব দেয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।
ডুবোযান টাইটানে পাইলটসহ ৫ আরোহী ছিলেন। আরোহীরা হলেন, ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং (৫৮), ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান (১৯), টাইটান প্রস্তুতকারী কোম্পানি ওশনগেটের শীর্ষ নির্বাহী স্টকটন রাশ (৬১) এবং সাবমেরিনটির চালক ও ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পল হেনরি নারগিওলেট (৭৭)। ডুবোযানটির পাইলট ছিলেন স্টকটন রাশ নিজেই।