মুখে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ফেনা তুললেও ক্ষতিপূরণ তহবিলের বেলায় সবাই চুপ। টুঁ-শব্দ করছে না কেউ।
ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই অচলাবস্থায় পড়েছিল ৬ নভেম্বের থেকে শুরু হওয়া মিসরের মারম আল শেখের কপ-২৭ সম্মেলন’র শেষ দিন। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শেষপর্যন্ত আরও এক দিন বাড়ানো হলে জলবায়ু সম্মেলনের মেয়াদ।
অর্থাৎ শুক্রবারের বদলে সম্মেলন শেষ হবে আজ-যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ তহবিলে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে ধনী দেশগুলো। এএফপি, গার্ডিয়ান।
তবে গরিব দেশগুলোতে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার সম্মেলনের শেষ দিনে নাটকীয়ভাবে এই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে ইইউ।
জলবায়ু পরিবর্তনের দায় বেশির ভাগ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দিকে গেলেও তাতে আপত্তি জানায় দুই দেশই। ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারম্যান ইইউ’র পক্ষে একটি প্রস্তাব জানান, যেখানে ধনী রাষ্ট্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। দাবির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় ধনী দেশগুলো। এ ধরনের সময়সাপেক্ষ তহবিলের কোনো প্রয়োজনীয়তা নিয়েও দাঁড় করায় পাল্টা যুক্তি।
টিমারম্যান বলেন, ইইউ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জোট ‘জি-৭৭’ এর কথা শুনেছে। যাদের জন্য এই মীর্ষ সম্মেলনে একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল প্রতিষ্ঠা করা মূল দাবি। ক্ষয়-ক্ষতি বলতে এখানে আবহাওয়ার চরম বিপর্যয় এবং জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগের পর উদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থকে বোঝায়। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ প্রস্তাব বিবেচনা করছে। ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির সেক্রেটারি জেনারেল কার্লা বার্নেট একটি দ্ব্যর্থহীন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বলেন, আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য এবং ছোট দ্বীপে ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর জন্য আর কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র আর্থিক তহবিলই ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জি-৭৭ এর একজন আলোচক বলেন, তিনি ইইউর প্রস্তাবে প্রভাবিত হননি। তিনি এটিকে জি-৭৭ কে ভাঙার অনুমানযোগ্য প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া বলে, তারা এর সাথে গঠনমূলকভাবে জড়িত হবে। অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন বলেন, আমরা সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষা করতে চায় কিভাবে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান এই তহবিলের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তাদের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারবে।
তবে এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ক্লিনটন হোয়াইট হাউজের প্রাক্তন জলবায়ু উপদেষ্টা পল ব্লেডসো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসে উন্নয়নশীল দেশে অর্থ প্রদান গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনকে প্রভাবিত করবে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছাতেও তা সহায়তা করবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত চীনের উপরেও অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করে।
কেননা দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় নির্গমনকারীর স্থান দখল করে আছে। অর্থনীতিতেও বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে রাখা চীন এড়িয়ে গেছে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত। কানাডার পরিবেশমন্ত্রী স্টিভেন গিলবল্ট বলেন, চীন, সৌদি ও কাতারের মতো সম্পদশালী ও উচ্চ নির্গমনকারী দেশকে অবশ্যই তহবিলে অবদান রাখা উচিত। তিনি জানান, ‘এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দরকার।