রাজশাহী:- রাজশাহীর তাপমাত্রা তো এখন সৌদি আরবের চেয়ে বেশি! এই গরমের মধ্যে বের হওয়া কঠিন। কিন্তু ঈদের কেনাকাটাও করতে হবে। তাই রাতেই এসেছি।’ সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের একটি দোকানে বাচ্চাদের পোশাক দেখতে দেখতে এমন কথায় বলছিলেন গৃহিনী তানিশা হাবিব।
স্বামী-সন্তানসহ ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন তিনি। তানিশা বলেন, ‘মার্কেটে যত মানুষ, আমার মনে হয় সবাই দিনের গরমের ভয়েই রাতে এসেছেন।’ পাশ থেকে তাঁর কথা সাঁয় মেলালেন বিক্রেতা রাশেদুজ্জামান রইস। বললেন, ‘সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা, তারপর রাত ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ক্রেতাদের প্রচুর চাপ। মাঝের সময়টা গরমের কারণে ক্রেতা কম। বিক্রিবাট্টা যা হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।’
গত সপ্তাহ থেকেই রাজশাহীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। সামর্থ্যবানরা কেনাকাটা সারছেন সিল্কের শোরুম কিংবা অভিজাত বিপনিবিতানগুলোতে। মধ্যবিত্তদের প্রথম পছন্দ সাহেববাজারের আরডিএ মার্কেট। আর নিম্ন আয়ের মানুষ কেনাকাটা করছেন কোর্টবাজার এবং গণকপাড়া এলাকার ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে। সামনে ঈদ বলে ভুবনমোহন পার্ক সংলগ্ন জুতা-স্যান্ডেলের দোকনগুলোতে বাড়তি লোক নিয়েও ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানিরা। সবখানেই মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলছে। সবচেয়ে ভিড় থাকছে আরডিএ মার্কেটে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে আরডিএ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। দুই ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা শেষ করে বের হচ্ছিলেন মোহনপুর থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক রাশেদুন নবী। তিনি বলেন, ‘এত ভিড় যে ঠিকমত পোশাকই দেখা যাচ্ছে না। তাও কোনরকমে সারলাম। দাম এবার একটু বেশি।’
বিষয়টি স্বীকার করলেন আরডিএ মার্কেটের অমিত গার্মেন্টসের মালিক অমিত দত্তও। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু পাঞ্জাবী বিক্রি করি। এবার কাপড়ের যে মান তার চেয়ে দাম একটু বেশি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ আছে। কিন্তু আমরা যেভাবে কিনছি, সেভাবেই বেচতে হচ্ছে। তারপরও মানুষ কিনছেন। ১২ রোজা থেকেই বিক্রি জমে উঠেছে। তবে দিনে গরমের কারণে রাতেই বেশি ভিড় লাগছে।’
আরডিএ মার্কেটে কসমেটিকস, ক্রোকারিজ ও অর্নামেন্টের দোকান থেকে ফুটপাতের টুপি, বেল্ট, আতর-সুরমার দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। গণকপাড়া মোড়ের ফুটপাতের প্যান্টের দোকান ও সেখানকার মার্কেটে নিম্ন আয়ের মানুষকে কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতেও জমেছে ঈদবাজার। রাজশাহী নিউমার্কেটে দাম একটু বেশি বলে ভিড় একটু কমই থাকে। সোমবার দুপুরে গিয়ে তেমনটাই দেখা গেল। সান শপিং সেন্টারের বিক্রয়কর্মী রাজীব কুমার বললেন, ‘নিউমার্কেটে সব কোয়ালিটি মাল। তাই দাম একটু বেশি। এখানে যাঁরা আসার তাঁরাই আসেন। ঈদের কেনাকাটায় যা বিক্রি হচ্ছে এতেই আমরা খুশি।’
গত ১ এপ্রিল শহরের কুমারপাড়ায় যাত্রা শুরু করেছে ‘আড়ং’ এর আউটলেট। পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই মিলছে সেখানে। সোমবার আউটলেটটির সেলস অ্যাসিসট্যান্ট দিদারুজ্জামান মীম জানান, আউটলেট চালুর প্রথম দিন থেকেই ভাল সাড়া পড়েছে। এতে তারা খুশি। সপুরা সিল্কের শোরুমের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বললেন, ‘আমাদের এখানে সকাল থেকে একেবারে মধ্যরাত অবধি ক্রেতাদের ভিড় থাকছে। কাল তো মধ্যরাতের পর ক্রেতাদের বললাম, এখন সবাই বাড়ি যান, আমরাও বাড়ি যাব। কাল আবার সবাই আসেন।’
রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘করোনার কারণে কয়েকটা ঈদ আমাদের ভাল যায়নি। এবার বেচাবিক্রি জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে লভ্যাংশের পরিমাণ কম। সবকিছুর দাম বেশি হওয়ার কারণে সীমিত লাভ করেই ব্যবসায়ীদের পণ্য ছেড়ে দিতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, এবার ঈদবাজারে রাজশাহীতে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হবে।