তেজগাঁও কলেজ এডহক কমিটির সাথে শিক্ষক -কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
তেজগাঁও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (এডহক কমিটি) সাথে কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটায় কলেজ অডিটোরিয়ামে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও তেজগাঁও কলেজ এডহক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোখলেস উর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডহক কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আর মাহমুদ তিতুমীর এবং এডহক কমিটির হিতৈষী সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমিন।
তেজগাঁও কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সোহেল রানার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমিন বলেন, আজকে আমরা একটা নতুন দিনের সূচনালগ্নে আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি প্রথমেই ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ২৪ এর বিজয়ের এক অন্তিম সময়ে আমাকে এই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিলো। ১৫ বছরের দুর্দশাগ্রস্ত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই আমাকে অনেক সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। আমি কলেজের দায়িত্ব নিয়ে দেখেছি বিগত ১৯ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড জমা হয় নাই। ২২ জন শিক্ষককে গ্র্যাচুইটি ফান্ড প্রদান করা হয় নাই। পরবর্তীতে সেই ২২ জন শিক্ষককে অবসরোত্তর ৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের যদি এক অর্থনৈতিক সংকট না থাকতো আমরা কলেজকে আরো এগিয়ে নিতে পারতাম। তবে আমরা পূর্বের জঞ্জাল সরিয়ে নতুন সূর্য আনবোই। আমাদের নতুন অভিভাবকমন্ডলী মহোদয়ের সু্যোগ্য নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
কলেজের এডহক কমিটির নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ জ ম কামাল উদ্দিন বলেন, আমি শুরুতেই এডহক কমিটির সভাপতি মহোদয়সহ অন্যান্য সদস্যদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। সভাপতি মহোদয়ের প্রতি আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের এই কলেজের হোস্টেলের জন্য একটি জমি রয়েছে। যেটি স্বাধীনতার পূর্বে কলেজের নামে ছিল। পরবর্তীতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে একজন ব্যক্তি ভূয়া মালিকানা দাবি করলে আমরা আর রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি। আমরা আপনার কাছে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করি। এছাড়া শিক্ষকদের যে দাবি দাওয়া গুলো রয়েছে সেইগুলোও আপনি পূর্ণ করবেন বলে আমরা আশাকরি।
কলেজের এডহক কমিটির নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, এখানে যে চারজন ব্যক্তি আছেন তারা স্ব স্ব জায়গায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাদের কাছে আমিও সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি রাখতে চাই। আমাদের কলেজের সামনে যে জায়গাটা রয়েছে সে জায়গায় একটা বহুতল ভবন করে যদি কলেজের অবয়বকে আরেকটু বাড়ানো যায় তাহলে আমরা সবাই উপকৃত হবো বলে আশাকরি। আপনারা জানেন আমাদের কলেজের হোস্টেলের একটি সমস্যা রয়েছে, সেখানে আপনারা হস্তক্ষেপ করলে এই জায়গাটার একটি স্থায়ী সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। এই কলেজে খন্ডকালীন শিক্ষক যারা আছেন তাদেরকে পূর্ণকালীন করতে হবে। আর যারা থেকে যাবেন তাদের বেতন যেনো ২৫-৩০ হাজার টাকা করা হয়।
এডহক কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আর মাহমুদ তিতুমীর বলেন, নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আজকে একটা বড় আনন্দের দিন শিক্ষক বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে। শিক্ষককের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ তৈরি করা। পড়াশোনার জন্য একটা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস খুবই জরুরি। এজন্য তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদেরকে সংখ্যাগত দিকের চেয়ে গুণগত দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ সাধন খুবই জরুরি বিষয়। তেজগাঁও কলেজ জাতি গঠনে জাতির মনন গঠনে ভূমিকা রাখবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও তেজগাঁও কলেজ এডহক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, এই কলেজের বয়স প্রায় ৬৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে এই কলেজ যেসব এচিভমেন্ট অর্জন করেছে সেজন্য আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই। এই কলেজের হোস্টেলের জমি নিয়ে যে সমস্যার কথা শুনলাম সেটির পূর্ণ ডকুমেন্টস পেলে সেটিরও সমাধান করা সম্ভব।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই কলেজ আজ বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান কলেজ এটি বলতে কোনো দ্বিধা নেই। এই কলেজের একটা এলামনাই গ্রুপ থাকতে হবে, যেখান থেকে বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। এই কলেজের গত ১৬ বছরের ইতিহাস যদি আপনি দেখেন কীভাবে টাকা সরিয়েছে। কীভাবে দুর্নীতি করেছে। তারপরও এই কলেজে এতো শিক্ষার্থী এটি খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। কলেজের সার্বিক উন্নয়নে আপনারাও পটেনশিয়ালি সময় দিবেন, আমিও পটেনশিয়ালি সময় দিবো। আমরা একসাথে এই কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
এছাড়া মতবিনিময় সভায় এডহক কমিটির হিতৈষী সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া, এডহক কমিটির নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সিলভিয়া খায়ের, এডহক কমিটির সাবেক সদস্য ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূর নবী আল মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।