ঢাকা , রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ভোলায় জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠিত- জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে উৎসবমুখর আয়োজন শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন হরিপুরে বৃক্ষ রোপন  কর্মসূচির উদ্ধোধন মোবাইল অপসংস্কৃতি রুখে মুক্ত সংস্কৃতির বিকাশে মতলব উত্তরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ১৪ দলের বৈঠক আজ হাউজিং প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে নিতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন “জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ” অনুষ্ঠান ফরিদগঞ্জে অনুষ্ঠিত মসজিদের ইমাম, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সরকারি বেতন ভাতা দিতে হবে- জামায়াত নেতা ড. ইকবাল হোসাইন ভূইয়া জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে মতলব উত্তরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান

পাটগ্রাম থানায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: চাঁদাবাজি, হামলা, বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার—উত্তপ্ত লালমনিরহাট

সাংবাদিক

নুর আলম সিদ্দিকী মানু, লালমনিরহাট থেকে ফিরে : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় মোবাইল কোর্টে দুই ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির দায়ে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, যানবাহনে বাধা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির যুবদলের এক নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত: মোবাইল কোর্ট ও চাঁদাবাজি অভিযোগ

বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২:৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার বুড়িমারী-রংপুর মহাসড়কের অ-বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস। এ সময় বেলাল ও সোহেল নামে দু’জনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজির টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। প্রশাসনের দাবি, এ দু’জন সড়কে চলাচলকারী পাথরবাহী ট্রাক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিলেন।

থানা ঘেরাও, সংঘর্ষ ও ভাঙচুর

ঘটনার খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা রাতেই পাটগ্রাম থানার সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় প্রবেশ করে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। থানার নয়টি ল্যাপটপ ভাঙচুর, একটি ল্যাপটপ চুরি, গাড়ি, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় আশপাশের হাতীবান্ধা থানা ও হাতীবান্ধা হাইওয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর চেষ্টা করলে বিএনপি কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে তাদের রওনা আটকানোর চেষ্টা করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনটি থানা কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে।

আহত ও গ্রেপ্তার

এই ঘটনায় পুলিশসহ মোট ২১ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের হামলায় তাদের অন্তত ১১ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটক চারজন হলেন:
১. আব্দুর রশিদ (৪৯), পিতা- মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সাং-সোহাগপুর।
২. মোঃ হাবিবুর রহমান (৪২), পিতা- আব্দুল জব্বার টিপু, সাং- বাউড়া।
৩. মোঃ মহিদুল ইসলাম (৩০), পিতা- আজিজুল ইসলাম, সাং- রহমানপুর মেসিরপাড়।
৪. আবুল কালাম (৫২), পিতা- মৃত মাহাতাব হোসেন, সাং- সোহাগপুর।

তাদের দলীয় পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি’র পাল্টা দাবি ও বহিষ্কার সিদ্ধান্ত

এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান দাবি করেছেন, বৈধ ইজারাদারদের বিনা কারণে আটক করে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তার ভাষায়, “ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মূল দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। প্রশাসনের ভূমিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে পাটগ্রাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নীতি-আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও অনাচারের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায় দল নেবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উচ্চ পর্যায়ের তৎপরতা ও প্রশাসনের অবস্থান

পরদিন সকালে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “অপরাধীর কোনো দল থাকতে পারে না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত ডিআইজি শরীফ উদ্দিন, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার, পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান।

এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি

এখনও পুরো পাটগ্রাম জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। থানা এলাকার আশপাশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুইদিন ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নেই, বেশিরভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন।

উত্তপ্ত রাজনীতির ছায়া

স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পাথর আমদানি, পরিবহন ও ইজারা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। প্রশাসনের অভিযানে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে ঘটানো হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না।

সচেতন মহলের দাবি

এই ঘটনার পেছনে স্থানীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনীতির বিরোধ, প্রশাসনের ভূমিকা এবং দলীয় কোন্দল—সবই মিলেমিশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। থানা ঘেরাও, ভাঙচুর, চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে লালমনিরহাটের রাজনীতিতে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যাচ্ছে এ ঘটনাকে।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৬:০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
৬৭৭ Time View

পাটগ্রাম থানায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: চাঁদাবাজি, হামলা, বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার—উত্তপ্ত লালমনিরহাট

আপডেটের সময় : ০৬:০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

নুর আলম সিদ্দিকী মানু, লালমনিরহাট থেকে ফিরে : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় মোবাইল কোর্টে দুই ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির দায়ে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, যানবাহনে বাধা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির যুবদলের এক নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত: মোবাইল কোর্ট ও চাঁদাবাজি অভিযোগ

বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২:৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার বুড়িমারী-রংপুর মহাসড়কের অ-বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস। এ সময় বেলাল ও সোহেল নামে দু’জনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজির টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। প্রশাসনের দাবি, এ দু’জন সড়কে চলাচলকারী পাথরবাহী ট্রাক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিলেন।

থানা ঘেরাও, সংঘর্ষ ও ভাঙচুর

ঘটনার খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা রাতেই পাটগ্রাম থানার সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় প্রবেশ করে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। থানার নয়টি ল্যাপটপ ভাঙচুর, একটি ল্যাপটপ চুরি, গাড়ি, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় আশপাশের হাতীবান্ধা থানা ও হাতীবান্ধা হাইওয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর চেষ্টা করলে বিএনপি কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে তাদের রওনা আটকানোর চেষ্টা করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনটি থানা কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে।

আহত ও গ্রেপ্তার

এই ঘটনায় পুলিশসহ মোট ২১ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের হামলায় তাদের অন্তত ১১ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটক চারজন হলেন:
১. আব্দুর রশিদ (৪৯), পিতা- মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সাং-সোহাগপুর।
২. মোঃ হাবিবুর রহমান (৪২), পিতা- আব্দুল জব্বার টিপু, সাং- বাউড়া।
৩. মোঃ মহিদুল ইসলাম (৩০), পিতা- আজিজুল ইসলাম, সাং- রহমানপুর মেসিরপাড়।
৪. আবুল কালাম (৫২), পিতা- মৃত মাহাতাব হোসেন, সাং- সোহাগপুর।

তাদের দলীয় পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি’র পাল্টা দাবি ও বহিষ্কার সিদ্ধান্ত

এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান দাবি করেছেন, বৈধ ইজারাদারদের বিনা কারণে আটক করে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তার ভাষায়, “ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মূল দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। প্রশাসনের ভূমিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে পাটগ্রাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নীতি-আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও অনাচারের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায় দল নেবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উচ্চ পর্যায়ের তৎপরতা ও প্রশাসনের অবস্থান

পরদিন সকালে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “অপরাধীর কোনো দল থাকতে পারে না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত ডিআইজি শরীফ উদ্দিন, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার, পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান।

এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি

এখনও পুরো পাটগ্রাম জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। থানা এলাকার আশপাশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুইদিন ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নেই, বেশিরভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন।

উত্তপ্ত রাজনীতির ছায়া

স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পাথর আমদানি, পরিবহন ও ইজারা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। প্রশাসনের অভিযানে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে ঘটানো হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না।

সচেতন মহলের দাবি

এই ঘটনার পেছনে স্থানীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনীতির বিরোধ, প্রশাসনের ভূমিকা এবং দলীয় কোন্দল—সবই মিলেমিশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। থানা ঘেরাও, ভাঙচুর, চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে লালমনিরহাটের রাজনীতিতে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যাচ্ছে এ ঘটনাকে।