মোঃসাধীন মিয়া ,রংপুর,পীরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
জলাইডাঙ্গা পূর্ব পাড়া, অনন্তরামপুর, পীরগঞ্জ, রংপুর এর ছেলে নাহিদ ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তা। কেঁচো সার ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে সে বেকারত্ব ঘোচাতে চায়। উদ্যোক্তা নাহিদ কামাল ১নং চৈত্রকোল ইউনিয়নের জলাইডাঙ্গা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান এর পুত্র। তিনি চৌধুরী গোপালপুর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োজিত আছেন
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী উপসহকারী কৃষি অফিসের আব্দুর রহমান এর সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই সে বাণিজ্যক ভাবে কেঁচো সার, ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক উৎপাদন শুরু করেছে। করোনাকালে চাকরির পাশাপাশি এক বছরের বেশী সময় ধরে একটি সেড তৈরি করে ক্যারেট পদ্ধতিতে ৩ কেজি কেঁচো, ছয়টি ক্যারেট দুটি দেশী গরুর গোবর দিয়ে কেঁচো/ ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। তাই তিনি পরবর্তীতে ক্যারেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তার সেডে এক শত ত্রিশটি ক্যারেট ও চারটি ট্রইকো হাউজ রয়েছে। বাড়ির গোবর সংকুলান হওয়ায় সে বাহির থেকে প্রতি মণ গোবর ৩০/৪০ টাকায় ক্রয় করে কেঁচো সার ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছে।
উল্লেখ্য, এক মণ গোবরে ২০ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন হয়। ইতিমধ্যই তার বাড়িতে ১২ ফুট লম্বা ৭ ফুট প্রস্হ ৩.৫ ফুট গভীরতা মাঝখানে ৩ ফুট পর পর চারটি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির চৌবাচ্চা নির্মাণ করেন। যাতে পর্যাপ্ত কেঁচো ব্যবহারে ৮০/১০০ মণ কেঁচো সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
নাহিদ জানায়, আমি নিজে জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফলা ফল পাচ্ছি। আমি আশাবাদী এখান থেকে আমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উপার্জনের পাশাপাশি নিজে চাষাবাদ করতে পারবো ও এলাকার কৃষকদের ফসলের উৎপাদন ফলন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারবো। তিনি বলেন, এলাকার কৃষকরা যখন আমার নিকট সার কিনতে আসে তখন আমার খুব ভালো লাগে।
ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার একটি জৈব সার যা জমির উর্বর শক্তি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। ১৫-২৫ দিনের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো যে মল ত্যাগ করে এবং তার শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বের করে দেয়ার পর যে মল ত্যাগ করে তাই ভার্মি কম্পোস্ট সার।
প্রতি ৩৩ শতাংশ জমিতে ধান, ভুট্টা, মরিচ, হলুদ, চাষে শেষ চাষের সময় ৩০০ কেজি, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ঢেড়স, পেঁয়াজ,রসুন ৩০০-৫০০ কেজি। লেবু, কুল, পেয়ারা, রোপনের সময় ও ফুল আসার পূর্বে বছরে প্রতি গাছে ২ কেজি, আম, নারিকেল, রোপনের সময় গাছ প্রতি ২ কেজি এবং ৫ বছর অধিক প্রতি গাছে ৫-১০ কেজি কেঁচো সার ব্যবহার করা যেতে পারে।
12 নম্বর মিলনপুর ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামের সবজী চাষী কৃষক চন্দন কুমার বলেন, এ বছর শসা,বেগুন ও করলার জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছি। আমি আর একটি জমিতে শীম চাষে আবারও ব্যবহার করছি এতে করে জমিতে আমার রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে।এ ফসলও ভালো হয়েছে আশা করি ফলন ভালো পাবো। আমার দেখাদেখি অনেকেই ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি উপসহকারী অফিসার বলেন, কেঁচো কে গরিবের লাঙ্গল বলা হয়। মাটিতে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমিতে আর বেশী কেঁচো দেখা যায় না। কেঁচো সার ব্যবহারে মাটিতে পুষ্টি উপাদান যুক্ত হয়, বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান পুষ্টি গুন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জৈব সার মাটিতে অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে, সবজি ফসলে মালচিং এর মত কাজ করে। সঠিক মাত্রা প্রয়োগ করলে ৪০-৫০% রাসায়নিক সার সাশ্রয় হয়। এক নাগারে তিন বছর ব্যবহারে পরবর্তীতে আর রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না।
অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচো কম্পোস্ট প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকায় মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। উপকারীতা পাওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা উপজেলায় বাড়ছে।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী উপসহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সারে ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ২.৬০% পটাসিয়াম, ০.৭৪% সালফার, ১.২৬% ফসফরাস, ২.০০% ক্যালসিয়াম, ২৮.৩২% জৈব পদার্থ আছে।