সিলেটে বন্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো সিলেটবাসী। সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দিনে এবং রাতে সমান তালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অজানা আতঙ্কে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন। অনেকে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত বন্যায় ২০০৪ সালের সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছে। আর এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অবস্থা এতই বেগতিক যে, মানুষ এখন আশ্রয়ও পাচ্ছেন না, বলে জানা গেছে। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয় কেন্দ্র করা নিয়ে দোলাচলে রয়েছে প্রশাসন। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন বানবাসী মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে সুরমা-কুশিয়ারার পানি অনবরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বেশি প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। বানের জলে ভেসে যাচ্ছে কাঁচা ও টিনশেড বাড়িঘর। অনেক জায়গায় নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তাও পোঁছাচ্ছে না মানুষের কাছে।
গত বন্যায় উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে প্রশাসন তৎপর থাকলেও এবার তা অপ্রতুল মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
তারা বলেন, আগে বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফা বন্যার পানিতে নিচু এলাকার অনেকের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বন্যার পানি অবিরাম নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত অন্তত ৬ ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সিলেট নগরীর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আশ্রয় নিতে আসা অনেক লোকজন জড়ো হয়েছেন। তবে এসএসসি পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত থাকায় স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে স্কুলের সামনের বারান্দায়, ভ্যানগাড়িতে অবস্থান করছেন মানুষ।
গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলা ও মহানগরীর অধিকাংশ জনপদ ডুবে গেছে। এরমধ্যে চরম দুর্ভোগ ও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। রাস্তাঘাট পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় লাখো বানবাসি মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না কেউ। এছাড়াও এসব গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছাতে নৌকাও মিলছে না। ফলে অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে।
সিলেটের কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, ৫ নম্বর বড়চতুল, পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকার শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে জরুরী কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। উপজেলায় ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে ৬টি ইউনিয়নে ২৪ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিধ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, পুরো জুন মাসে ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু ১৬ তারিখ পর্যন্ত ৯৪ দশমিক ৮১ শতাংশ অর্থাৎ ৭৭৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত সিলেটে ভারি বর্ষণ হবে। তাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।