Saturday , 18 May 2024
শিরোনাম

ময়মনসিংহে হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আরো দুই হত্যা!

ময়মনসিংহের ত্রিশালে হত্যা মামলায় সাক্ষী দেওয়ার জেরে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের জিলানী বাহিনীর মূলহোতা আব্দুল কাদের জিলানীকে দুই সহযোগসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার বাকি দুইজন হলেন- জিলানীর ভাই আব্দুস সোবহান ও জিলানীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৭)।
র‌্যাব জানায়, চক্রটি স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আসছিলেন। এর প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ও রফিকুল ইসলামকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে তারা আরও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটান।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে ১৪ এপ্রিল রাতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম ও তার দুই ভাতিজাকে বাড়ির সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আবুল কালাম (৫৮) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এই ঘটনায় নিহতের ভাতিজা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের জিলানীর বাঁশঝাড় থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ নিহত রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। সেই মামলায় সোহাগ আদালতে সাক্ষী দেওয়ায় জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেন। এরই জের ধরে ১৪ এপ্রিল রাতে তার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়।

সোহাগের চিৎকারে চাচা আবুল কালামসহ তার ছোট ভাই ও চাচাতো ভাই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে আব্দুল কাদের জিলানীসহ নয় জন তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। পরে সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আবুল কালাম আজাদ মারা যান।

এই কর্মকর্তা বলেন, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। জিলানীর নেতৃত্বে চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রয় করতেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ১৯ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। তাদের এই কাজের প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে ৪ জুলাই রাতে মতিন মাস্টারকে হত্যা করেন আব্দুল কাদের জিলানী ও তার বাহিনী।

ওই সময় সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হলে তদন্তে আদুল কাদের জিলানীর ভাই তোফাজ্জল হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন ও তার আরেক সহযোগী মো. মোবারক হোসেনসহ আট জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

এরপর এই মামলা থেকে বাঁচতে স্থানীয় কাউকে হত্যা করে মতিন মাস্টার হত্যা মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে হাজিরা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করেন জিলানী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল রাতে স্থানীয় স্কুলের দপ্তরি রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। এই রফিকুল মতিন মাস্টার হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল মিটিং করে আসছিলেন।

দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যায় জিলানীসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী মো. সোহাগকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাক্ষী সোহাগকে ঘটনার দিন রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হলে তার চাচা আবুল কালাম এগিয়ে এলে নির্মমভাবে খুন হন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আব্দুল কাদের জিলানী এলাকায় সন্ত্রাসী, ভূমি দখল ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুইটি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান সংক্রান্ত মোট ১২টি মামলা ও ১০টি জিডি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন।

Check Also

নরসিংদীতে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু

নরসিংদীতে আলাদা স্থানে বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x