মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শেষ না হতেই এবার বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন সংক্রমণ ‘মাঙ্কিপক্স’। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সারাবিশ্ব।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষের দেহে এই সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রত্যেক বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার (২১ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ সমস্ত পোস্টগুলোকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ আসলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া অতিদ্রুত যেন তাকে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এতো প্যানিক (আতঙ্ক) হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি আমরা করবো।
জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, আমরা যখন কোন নির্দেশনা দেই, তখন সেটি জেলা সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়েই সেটি চলে যায়। সব জেলায় ল্যান্ড পোর্ট (স্থল বন্দর) নাই, যেসব জেলায় আছে সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ, ভাইরাসটিতো মূলত স্থল বন্দর দিয়ে আসে, তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, যুক্ত্ররাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার স্পেনে ২৪ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ইসরাইলের এক হাসপাতালে ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যার শরীরে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা গেছে। তিনি সম্প্রতি পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ইসরাইলে গেছেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হওয়া লোকজনের মাঝে— এমন অনেক পুরুষ আছেন, যারা পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন। স্পেনের মাদ্রিদ অঞ্চলের সাউনার কয়েকটি ঘটনায় এ ধরনের শারীরিক সম্পর্কের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয় নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড একাডেমিক।
শনাক্তদের বেশিরভাগের সঙ্গে আফ্রিকা ভ্রমণের ইতিহাস নেই। যে কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অস্পষ্ট। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সামাজিক সংস্পর্শ থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।