আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ভঙ্গ করে অভিবাসীদের মিশরে বহিষ্কার করছে মাল্টা কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ করেছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসসহ চারটি এনজিও। এমএসএফ আরও দাবি করেছে, এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়৷ দেশটি এর আগেও অভিবাসীদের পুশব্যাক না করার নীতি লঙ্ঘন করেছে।
একটি নতুন প্রতিবেদনে আন্তজার্তিক ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স- এমএসএফ দাবি করেছে, মধ্য ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত মাল্টিজ অনুসন্ধান ও উদ্ধার এলাকা (এসএআর) জোন থেকে উদ্ধার হওয়া ২৩ অভিবাসীকে মিশরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমএসএফ দাবি করেছে, এই ২৩ অভিবাসীকে মাল্টার রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের (আরসিসি) নির্দেশে ২৬ সেপ্টেম্বর মিশরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভূমধ্যসাগরে সক্রিয় অন্যান্য ইউরোপীয় এনজিও অ্যালার্ম ফোন, মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস এবং সি-ওয়াচও একই অভিযোগ তুলেছে। তাদের মতে, সমুদ্রে থাকা অন্যান্য এনজিওগুলোর সহায়তায় ‘শিমানামি কুইন’ নামে পানামার পতাকাবাহী একটি বণিক জাহাজ ২৩ অভিবাসীকে মাঝ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছিল।
পুশব্যাক বিরোধী নীতি লঙঘন করে অভিবাসীদের মিশরে ফেরত পাঠানোর পেছনে মাল্টা সরকারের নির্দেশ রয়েছে। এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে এমএসএফ এবং অন্যান্য এনজিওগুলো ভূমধ্যসাগর জুড়ে ‘শিমানামি কুইন’ জাহাজের গতিবিধি সম্পূর্ণ নথিভুক্ত করার দাবি করেছে।
১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী দেশের কোন একটি আঞ্চলিক সীমান্তে কারও জীবন অথবা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়লে সেক্ষত্রে উক্ত ব্যক্তিকে বহিষ্কার বা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
মাল্টা কর্তৃপক্ষ মূলত জেনেভা কনভেনশনের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে চার এনজিও।
জবাব দেয়নি মাল্টা কর্তৃপক্ষ
সর্বশেষ প্রতিবেদনের কোন আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি ভূমধ্যসগারের ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
মাল্টার বিরুদ্ধে অতীতেও এনজিওগুলো লিবিয়ায় অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তন সংগঠিত করার অভিযোগ এনেছিল।
তবে দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট অ্যাবেলা সে সময় বলেছিলেন, তার দেশ উদ্ধার প্রক্রিয়া প্রাথমিক দায়িত্ব মেনে চলে যাতে করে কেউ সমুদ্রে মারা না যায়।
এনজিওগুলি জানিয়েছে, সর্বশেষ ঘটনাটি ২৬ সেপ্টেম্বর ঘটেছে। একটি ছোট নৌকায় থাকা অভিবাসীরা চার দিন ধরে সমুদ্রে ভেসে থাকার পর একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক জাহাজ তাদেরকে উদ্ধার করেছিল।
তাদের অভিযোগ, মাল্টা রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (আরসিসি) সঙ্কটে থাকা নৌকার আশেপাশে থাকা বণিক জাহাজগুলোকে শুধুমাত্র তাদের নির্ধারিত রুটে যাত্রা চালিয়ে যেতে অথবা স্ট্যান্ডবাই বা নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছিল। যার ফলে উদ্ধার অভিযানে উল্লেখযোগ্যভাবে বিলম্ব হয় এবং অভিবাসীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল।”
একটি যৌথ বিবৃতিতে এনজিওগুলো জানায়, “আমরা সমুদ্রের এসএআর (অনুসন্ধান ও উদ্ধার) জোনে উদ্ধার কার্যক্রমে জড়িত সংস্থা হিসাবে, এই ২৩ জনকে জোরপূর্বক মিশরে স্থানান্তরের নিন্দা জানাই। সামুদ্রিক ও আন্তর্জাতিক আইনের নির্মম লঙ্ঘনের জন্য মাল্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়ার আহ্বান জানাই।”
অভিবাসীদের জন্য মিশর ‘অনিরাপদ’
এনজিওগুলো বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্র থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারের পর মাল্টা এবং ইটালির মতো নিকটস্থ দুটি নিরাপদ দেশ থাকার পরেও তাদেরকে এগুলোর কোনটিতেই অবতরণ করা হয় নি। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য মিশর নিরাপদ দেশ নয়।
যদিও তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে এই দুই দেশের সবচেয়ে কাছের সীমান্ত থেকে। সে সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল মাল্টা এবং ইটালি উপকূল থেকে যথাক্রমে ১৫৯ এবং ১৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে।
অথচ আরসিসি মাল্টা ‘শিমানামি কুইন’ জাহাজকে উদ্ধারকৃত লোকদের নিয়ে ৭৬০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে অবস্থিত মিশর উপকূলে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। যা ইটালি ও মাল্টা উপকূলের চেয়ে আরও পাঁচ গুণ দূরে।
এনজিওগুলোর মতে, “মিশর ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও, দেশটিতে শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত জাতীয় আইনি কাঠামোর অভাব রয়েছে।” সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
Tweet