এস, কে সাহেদ, লালমনিরহাটঃ দীর্ঘ ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজেদের দলীয় কোন্দলের কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়নি। এদিকে ক্ষমতায় থাকার একযুগেও সদর উপজেলার মাঠ গোছাতে না পারায় জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল আওয়ামিলীগ।
৫টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে লালমনিরহাট তিনটি সংসদীয় আসন গঠিত। পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলা মিলে লালমনিরহাট এক আসন, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী নিয়ে লালমনিরহাট দুই আসন এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলা নিয়ে লালমনিরহাট তিন আসন গঠিত।
নিজেদের কোন্দলের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ জেলা সদর উপজেলার আসনটি টানা ক্ষমতায় থাকার ১৩বছরেও মাঠ গোছাতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ। ফলে দীর্ঘ দিনেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাবেক সংসদ সদস্য প্রায়ত প্রকৌশলী আবু সাঈদ দুলালকে সভাপতি ও শফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর কোনো এরপর আর সম্মেলন করতে পারেনি দলটি।
নিজেদের কোন্দলের কারণে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া দলটির একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন।
তবে ২০১৭ সালে আব্দুল লতিব সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিজেদের কোন্দলের কারণে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সে সম্মেলনও সফল হয়নি।
তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেও কেন্দ্রীয় নেতারা গোলাম মোস্তফা স্বপনকে সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা প্রায়ত জহুরুল হক মামুনকে সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু তা কেন্দ্রীয় নেতাদের মৌখিক ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। জেলা আওয়ামী লীগ এ ঘোষণাকে সমর্থন না দেওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি।
পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের ভাতিজা সাবেক ছাত্রনেতা এরশাদ হোসেন জাহাঙ্গীরকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এমন ঘোষণার পর আবারও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ায় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ওই দুই গ্রুপ। বেশ কিছু দিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার ফলে ওই কমিটিও সফল হয়নি।
পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য সাবেক সংসদ অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমিকে আহ্বায়ক করলেও তা সফলতা পায়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েও উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হওয়া নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে পণ্ড হয় প্রচেষ্টা।
সর্বশেষ কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের ৯অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হলেও তা আবার স্থগিত হয়।
সদর উপজেলা আওয়ামিলীগের দুই গ্রুপের পদ প্রত্যাশিদের সভাপতি ও সম্পাদক পদে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে সভাপতি পদ প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাখওয়াত হোসেন সুমন খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সুজন, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম। সম্পাদক পদ প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন, সাবেক ছাত্রনেতা এরশাদ হোসেন জাহাঙ্গীর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর
জেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন প্রবীণ নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে জেলার শীর্ষ ৪নেতা দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। জেলার রাজনীতি ওই ৪নেতার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে পারলে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করা সম্ভব হবে। দ্রুত বিভেদ ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
দলীয় কোন্দল নিরসন ও সদর উপজেলা আওয়ামিলীগের কমিটি না হলে এই আসনটি বিএনপির দুর্গে পরিনত হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
জেলা আওয়ামীলীগে যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক এ নিয়ে কোন কর্ণপাত করছেন না। দীর্ঘ দিন ধরে কমিটি না থাকায় সদরের মত গুরুত্বপূর্ণ সদর আসনটি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি করা হয়েছে। জাতীয় সম্মেলন শেষে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সদর উপজেলা সম্মেলন করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, কমিটি ছাড়া দল কখনই সু সংগঠিত থাকে না। দলের জাতীয় সম্মেলন শেষ হলেই সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে।