মোঃ মহিবুল ইসলাম, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনার পাথরঘাটায় হাড়িটানা সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ, কোচিং ফি ও মাদ্রাসার উন্নয়ন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে বিপাকে পড়েছেন অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। এদিকে কোচিং না করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা সুপার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোর্ড নিধারিত প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ১১৮৫ টাকা ফরম পূরণের জন্য জমা দিয়ে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে হবে এবং কেন্দ্র ফি ৩৬০ টাকা পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। কিন্তু হাড়িটানা সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো. রুহুল আমিন প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য ১৫০০ টাকা, কোচিং ফির জন্য ১ হাজার টাকা নেন। মাদ্রাসার উন্নয়র ফির নামে আরও ৫০০ টাকা নেন।
দাখিল পরীক্ষার্থী রাকিব, হাচান, রাহাদ, অব্দুল্লাহ ও রাকিবুল জানান, মাদ্রাসা সুপার রুহুল আমিন ফরম পূরণের জন্য ১৫০০ টাকা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে নিয়েছে। এছাড়া কোচিংয়ের জন্য ১ হাজার ও মাদ্রাসার উন্নয়নের জন ৫০০ টাকা নিয়েছে। ফরম পূরণের জন্য কত টাকা নির্ধার করা হয়েছে তা জানতে চাওয়ায় ধমক দিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন।
কোচিংয়ের টাকা নিয়ে তাদের কোনো ক্লাস করাননি শিক্ষকরা। কোচিং করানোর কথা বলতেই শিক্ষার্থী রাহাতকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন মাদ্রাসা সুপার।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বাদল, সোহরাব হাওলাদার ও মোতালেব মুন্সি বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। আমরা গ্রামের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খেতের ফসল জমি-জমা পানির নিচে, ঘরে খাবার নেই। এত কিছু একসঙ্গে সামাল দিতে নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তার ওপর সরকার নির্ধারিত ফরম পূরণের টাকা ধারদেনা করে জোগাড় করতে হচ্ছে। আবার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উন্নয়নের নামে বেশি টাকা নেয় তাহলে আমরা যাব কোথায়? কোচিংয়ের কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সেখানে একটিও ক্লাস করায়নি। এরকম যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা করে তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
হাড়িটানা সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো. রুহুল আমিন কোচিং করার টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ফরম পূরণ বাবদ অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগটি মিথ্যা, তবে কোচিং ফির জন্য ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা নিয়ে কেন কোচিং করাননি এবং শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে চাওয়ায় তাদের মারধর করা হয়েছে কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এরকম কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সুপার দুষ্ট প্রকৃতির লোক, সে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঝামেলা করে থাকে। তার বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ হয়েছে