পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দৌলতদিয়া ঘাটে আমাদের আরেকটি ব্রিজের সক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আমার ধারণা এই ব্রিজের কাজে আমরা খুব শিগগিরই হাত দিতে পারব।
শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘পদ্মা ব্রিজ: এ ড্রিম ট্রান্স ইনটু রিয়ালিটি’ শীর্ষক সেমিনার এবং পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট প্যানেল অব এক্সপার্ট, প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী মো. নূরল হুদার সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান এবং আইইবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শামীম জেড বসুনিয়া। সেমিনারের স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহদাত হোসেন (শীবলু), মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার এম ফিরোজ আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইইবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রনক আহসান।
সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য এবংপানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আইনুল নিশাত, আইইবির পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম এবং আইইবির সহ-সভাপতি (এইচআরডি) ও সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান।
পরীকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যে আস্থা, বিশ্বাস এদেশের প্রকৌশলীরা রেখেছেন তা সত্যিই প্রসংশনীয়। ছোট ছোট কাজগুলোই সামনের বড় কাজকে পথ দেখাবে। আগামীর বাংলাদেশ গঠনে সুদৃঢ় ভিত্তিপ্রস্তুর তৈরিতে প্রকৌশলীরা ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমার ধারনা, বাংলাদেশের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত এটাই (পদ্মা সেতু) সবচেয়ে বড় হবে। আমাদের ইতিহাসে অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে যেসব স্থানীয় প্রকৌশলী অবদান রেখেছেন তাদের অভিনন্দন। আমি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত তৃপ্ত।
এস এ মান্নান বলেন, আমাদের এখন তৈরি হতে হবে আরও ব্রিজ, আরও টানেল নির্মাণে। এরই মধ্যে দৌলতদিয়া ঘাটে আমাদের আরেকটি ব্রিজের সক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আমার ধারণা এই ব্রিজেও আমরা খুব শিগগিরই হাত দিতে পারব। আমার নিজের অনেকগুলো স্বপ্ন আছে।
মন্ত্রী বলেন, ভোলার সঙ্গে সংযোগ এটা আমাদের হওয়া খুবই প্রয়োজন। এটা সম্ভব বলে আমি মনে করি। আর্থিকভাবে অবশ্যই সম্ভব। টেকনিক্যালি হবে কিনা, আপনারা আছেন পন্ডিত ব্যক্তিরা, আপনারা ঠিক করবেন। আশা করি, আমাদের সরকার আজ না হোক, কাল না হোক, পরশু অবশ্যই হাত দেবে। অনেক অবকাঠামোর কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে। সেতুই বাংলাদেশের বড় উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারে ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একটা শক্তিশালী টিম না হলে পদ্মা সেতু সম্ভব হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় খুব দ্রুতই ফাইল সম্পন্ন হতো। অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কারণে আশাবাদী হয়ে বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।
ড. আইনুল ইসলাম বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু পেয়েছি। এই সেতু সাহস যুগিয়েছে আগামীর জন্য।
অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের প্রতীক। এই সেতুতে যুক্ত সব প্রকৌশলী সৌভাগ্যবান। তারা শুধু ইতিহাসের সাক্ষীই নন, বরং নির্মানকারী হিসেবে ছিলেন।
অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, টেন্ডার এবং পরিবেশের যাচাই করার ক্ষেত্রে মা প্রধানমন্ত্রী যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রসংশনীয়। বিশ্বব্যাংক যত দিন পদ্মা সেতুর সঙ্গে ছিল, তত দিন বাধা হয়েছিল।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নিচে কিছু চরে কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্য কম্পেনসেটরি গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। ইলিশ রক্ষা করতে গিয়েও আমরা কাজের গতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। ল্যান্ড রিসেটেলমেন্ট বিষয়ে এখনো কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এটাই অন্যতম অর্জন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন আইইবির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, প্রকৌশলী এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রতীক কুমার ঘোষ, প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম তুহিন।
এর আগে আইইবির ৬২৯ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্যরা সরাসরি এবং ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ।সূত্র-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম