কুষ্টিয়ার চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ইমরান শেখ ইমন (৩২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার দিবাগত রাতে শহরের রাজারহাট মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম।
গ্রেপ্তারকৃত ইমরান শেখ ইমন শহরের কোর্টপাড়া এলাকার শামসুল আলম সামুর ছেলে। তার বিরুদ্ধে জেলা ও জেলার বাইরে অস্ত্র, মাদক, চুরি ও মারামারির ৪টি মামলা চলমান রয়েছে। এর আগেও ইমন আগ্নেয়াস্ত্র ও ফেনসিডিলসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
ইমন কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির নেতা ছিলেন। জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তার গভীর সখ্যতা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃত ইমন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এর আগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কাজী সোহান ও খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েলও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানান পুলিশ সুপার।
কি কারণে সাংবাদিক রুবেলকে হত্যা করা হলো- এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মামলার তদন্ত এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে আপাতত এর বেশি কিছু জানানো সম্ভব নয়।
সাংবাদিকতা করার কারণে রুবেল হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি বলে দাবি করেন এসপি। গ্রেপ্তারকৃত ইমনকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার মৃত হামিদ মোল্লার ছেলে কাজী সোহান শরিফ (৪০) ও একই এলাকার মৃত খন্দকার হারুন উর রশিদের ছেলে খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েলকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা এখন কারাগারে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই (রোববার) রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রুবেল কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট সংলগ্ন নিজ পত্রিকা অফিসে কাজ করছিলেন। এ সময় মোবাইলে একটি কল পেয়ে তিনি অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে এনএস রোডের সিঙ্গার মোড়ের দিকে যান। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে সাংবাদিক রুবেলের ছোট ভাই মাহাবুব ওই রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর- ২০৩।
এ ঘটনার চারদিন পর ৭ জুলাই দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নির্মাণাধীন যদুবয়রা সংযোগ সেতুর শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে হাসিবুর রহমান রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ-পুলিশ। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কুষ্টিয়ার খবরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং জাতীয় দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ছিলেন।
এ ঘটনায় পরের দিন ৮ জুলাই নিহত হাসিবুর রহমান রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১২। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানে ছেলে। রুবেল সাংবাদিকতার পাশাপাশি কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেটে আল মদিনা ভাণ্ডার নামে পৈত্রিক কাঁচামালের আড়ত (পাইকারি) ব্যবসা করতেন। এছাড়া তিনি ঠিকাদারিও করতেন।