মো. আহসানুল ইসলাম আমিন, স্টাফ রিপোর্টার :
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চানন্দের চর ও খাসকান্দি গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার খাসকান্দি মৌজায় তিন ফসলি কৃষিজমির মাটি কাটে পকেট বানিয়ে সেখানে বালু ভরাটের হিড়িক পড়েছে। দিনে দুপুরে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মদিনা পাড়ার মৃত মনতা মিস্ত্রির ছেলে আব্দুস সালাম সহ তার সহযোগী চক্র তিন ফসলি জমির মাটি কেটে সেখানে বালু ভরাট করে আসছে। যার মধ্যে রেকর্ড করা সম্পত্তির পাশাপাশি খাস জমিও আছে। ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন আইন মানছে না এই ভূমিদূষ্য সালাম চক্র। এমনকি কোন প্রকার অনুমোদন ও নেওয়া হয়নি স্থানীয় প্রশাসন থেকে। যার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচির্ত্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন কৃষকেরা।
আজ শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দের চর খাসকান্দি গ্রামের খাসকান্দি মৌজার তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিঘা বিঘা জমিতে পকেট বানাচ্ছে বালু ভরাটের জন্য।এতে স্থানীয় জনগণ মৌখিক ভাবে তাদের বাঁধা দিলেও সালাম চক্র বাঁধার তোয়াক্কাই করেনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খাসকান্দি মৌজায় একদিকে রোপণ হচ্ছে আগাম আলু অন্যদিকে ভেকু লাগিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে বিঘা বিঘা জমি এতে সরাসরি খাদ্য সংকটের বার্তা দিচ্ছে স্থানীয় ভূমিদূষ্যরা।জানা যায়, এখানার এই জমিতে আউশ, আমন,সাইলসহ রবি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের চাষাবাদ হয়,বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের আগাম আলু রোপণের অন্যতম জমি এগুলো সেসব জমিতে ক্রমান্বয়ে বাসাবাড়ি, আবাসিক, বাণিজ্যিক আর বহুতল ভবন গড়ার লক্ষে এসব কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে বাড়ি ও বহুতল ভবন বানাতে ব্যস্ত এই চক্রটি।
খাসকান্দি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ইয়াসমিন বলেন, বালুচর ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের খাসকান্দি,চান্দেরচর সহ কয়েকটি গ্রামে ৬৫৫ হেক্টর তিন ফসলি জমি ছিল। বর্তমানে ৫৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। রেললাইন, হাউজিং এবং ইটভাটার কারণে ১১০ হেক্টর তিন ফসলি জমি কমে গেছে। এই এলাকাগুলোতে আগাম শাকসবজি এবং শীতকালীন শাকসবজির সহ বিভিন্ন ফসল ফলাতে পারত কৃষকেরা। দিন দিন কয়েকটি চক্র এই ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি সহ বিভিন্ন ভাবে গ্রাস করে ফেলছে। এতে করে কৃষিজমির দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমরা চাই এখনই এগুলো বন্ধ হোক। তা না হলে এক সময় এই এলাকাগুলোতে জমি থাকবে না।
বালুচর ইউপি সদস্য আলেকচান সজীব বলেন, গতকালকে নায়েব আমাকে ফোন দিয়েছিল। পরে তারা এসে মাটি কাটা বন্ধ করেছে কিনা সে বিষয়ে আমি জানিনা। তবে কালকেও মাটি কেটেছে। আজ কাটছে কিনা সে বিষয়ে আমি বলতে পারছিনা।
এবিষয়ে বালুচর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মো. অয়াহিদ বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত আছি ছুটির দিন বিদায় পরিদর্শনে যেতে পারিনি তবে আগামী কাল সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন কেউ জমির শ্রেণী পরিবর্ত না করে অথবা অনুমোদন না নিয়ে এভাবে ফসলি জমি কাটতে পারেনা।
এবিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসলিমা আক্তার বলেন, আমরা খবর পেয়ে মাটিকাটা বন্দে ওই স্থানে নায়েবকে পাঠিয়েছি। আপনারা আজকে একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন যদি মাটিকাটা আবারও শুরু করে। তবে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অভিযুক্ত মদিনা পাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, আমি জমি কেনাবেচা করি। আমার কাছ থেকে যারা জমি কিনে নিয়ে যায় তারা বাড়ি বানানোর জন্য জমি কাটে হয়তো।আমি মাটি কেটে বিক্রি করি না। তবে এখন কারা জমি কেটে ভরাটের কাজ করছে আমি জানি না এবং তাদের সাথে আমার কোনো সম্পপৃক্ততা নেই। আমি মাটি বিক্রি করি না, আমি শুধু জমি কেনাবেচা করি।