টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর হাজার হাজার বসত ঘরে বানের পানি ডুকে পড়েছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের শতশত বসত ঘরের নিচতলায় কোমর পানিতে ডুবে আছে।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়ন বন্যার পানিতে ইতিমধ্যে ডুবে গেছে। জেলা শহরে সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন, সেই সঙ্গে গত ৩দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই।
প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের জেলা শহর পানিতে ডুবে যায়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।’
পৌর শহরের একতলা বিশিষ্ট সব বাড়ি এখন প্লাবিত। শহরের প্রতিটি গলিতে এখন নৌকা চলছে। শহরের সব দোকানপাট প্লাবিত হয়ে নিত্যপণ্য ও ওষুধসহ নানা পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ২০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো বিতরণ করবে। সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
উপজেলার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ ওঠেননি।
উপজেলার সদর বাজার, সুলেমানপুর বাজার, বালিজুরি বাজার, পাতারগাঁও বাজার, কাউকান্দি বাজার, একতা বাজার, নতুন বাজার ও শ্রীপুর বাজার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নিন্মাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ নেই। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছি। সন্ধ্যা থেকে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে, যাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।’
সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, মেঘালয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমায় পানি বাড়তে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।