দিলীপ কুমার দাস নিজস্ব প্রতিবেদক।
হালুয়াঘাট উপজেলায় চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নে চলতি বছর ৫ জন কৃষক ৫ বিঘা জমিতে ১ কেজি করে সূর্যমুখী ফুলের বীজ নিয়ে চাষ শুরু করেন। আবহাওয়া ও জমি চাষের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি জমিতে সূর্যমুখী ফুল হাসিমুখে সূর্যের হাসি ছড়াচ্ছে চারদিকে। হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য্য দেখতে আশে-পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা জমির পাশে ভিড় করছেন। কেউ কেউ আবার স্মৃতি ধরে রাখতে ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তুলে নিচ্ছেন ছবি।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সূর্যমুখী ফুল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমির জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তর পতিত-আমন অথবা পতিত-আউশ-আমন বিন্যাস আবাদ করা যায়। স্বল্প বা মাধ্যম জীবনকালের আমন ধান চাষের পর অতি সহজেই সঠিক সময়ে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। সঠিক চাষ পদ্ধতিতে কৃষক সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভবান হতে পারে। হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে এ ফুলের চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড রয়েছে। এ ফুলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই বলে হৃদরোগীদের জন্য, সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী। আগষ্ট ও মধ্য অক্টোবর মাসে এ ফুলের আবাদ করার উপযুক্ত সময়। সূর্যমুখী গাছ উচ্চতায় ৩ মিটার বা ৯ ফুট হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ১২ ইঞ্চি ব— হয়। সূর্যের মত সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ বলে জানা যায়।
কৃষক ইব্রাহিম স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চাকুরী করেন, পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১ কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ নিয়ে বাড়ির পাশে ১ বিঘা জমিতে রোপন করেন। তিনি জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবিএম লুৎফর রহমান নয়ন তাকে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বর্তমানে তার জমিতে সকল গাছে ফুল ফুটেছে। বাজার মূল্য ভালো থাকায় এ থেকে তার ভালো লাভ হবে।
আরেক কৃষক সুমন জোয়ারদার বলেন, আগে কৃষি জমিতে বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করেছি। কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের চাষ করিনি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় আমি এ ফুলের চাষ করি। বর্তমানের আমার ক্ষেতে প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। এক একটি ফুলের ওজন ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম হবে। আমি আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ ফুলের চাষ করবো।
গাজিরভিটা ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবিএম লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, আমি সবসময় কৃষকদের নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করে থাকি। এ বছর আমার এখানে পাঁচজন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে। আমি সবসময় তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এলাকার অনেক কৃষক সূর্যমুখীর ফলন দেখে উৎসাহিত হয়েছে। আগামীতে এ অঞ্চলে এর চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ফসলের নিবিরতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। আসলে এটির মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকরা যদি এটি আবাদ করে তাহলে বাজারে এর যে চাহিদা ও মূল্য রয়েছে তাতে কৃষকরা অধিক পরিমানে লাভবান হবে। এতে করে আগামীতে তারা নিজেরাই বীজ ক্রয় করে জমিতে চাষ করবে। আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা সবসময় কৃষকদের বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে তাদের ফসল রক্ষায় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।