অতি উচ্চাভিলাষী একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সৌদি আরব। যা হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। নিওম সিটি নামে পরিচিত এ অবকাঠামো তৈরি করা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে লোহিতসাগর পাড়ের মরুভূমিতে। আর শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হবে এর কাঁচঘেরা ‘আকাশচুম্বী’ ভবন। যার নির্মাণে ব্যয় করা হবে ১ লাখ কোটি ডলার।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাতে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাখো কোটি ডলার ব্যয়ে নিওম শহর নির্মাণ করছে সৌদি আরব। এর মধ্যদিয়ে শহর সম্পর্কে আমাদের চিরায়ত ধারণাই বদলে দিতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক এ দেশটি।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভবনের পরিবর্তে এ শহরে লম্বা একটি লাইনের মতো তৈরি করা হবে দুটি গগনচুম্বী ভবন। ‘দ্য মিরর লাইন’ নামের এ ভবন দুটির উভয় পাশে থাকবে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল। সেই দেয়ালে প্রতিফলিত হবে আলো।
দেয়ালগুলো ৪৮৮ মিটার (১৬০০ ফুট) তথা প্রায় আধা কিলোমিটার উঁচু হবে। ভবনের দৈর্ঘ্য হবে ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল)। যা উপকূলীয় অঞ্চল, পর্বত ও মরুভূমির মধ্যদিয়ে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাবে। তবে ভবনের প্রস্থ হবে মাত্র ২০০ মিটার।
ভবন দুটি পায়ে হাঁটার পথের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং ভবনের নিচে চলবে একটি উচ্চগতির ট্রেন। অতিকায় এ ভবন নির্মাণ করতে পুরো এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। ৫০ লাখ লোক এখানে বসবাস করতে পারবে।
এবং ভবনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিটের মতো। ভবনের নকশায় আরও রয়েছে সমন্বিত ভার্টিক্যাল বা খাড়া কৃষি ব্যবস্থা, ইয়ট রাখার জন্য একটি বিশেষ স্থান ও মাটি থেকে ৩০৫ মিটার ওপরে একটি স্পোর্টস স্টেডিয়াম।
এখনও পর্যন্ত জ্বালানি তেলই সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু দেশকে এই তেল নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে চাইছেন সৌদি যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) মোহাম্মদ বিন সালমান। সেই লক্ষ্যে গত সপ্তাহেই তিনি অতি উচ্চাভিলাষী ওই নির্মাণ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।
একটি মরুভূমিকে একটি উচ্চ প্রযুক্তির শহরাঞ্চলে পরিণত করার কথা বলছেন যুবরাজ। নিওম নামে ওই শহরের আকার হবে প্রায় বেলজিয়ামের সমান। গ্রীক শব্দ ‘নিও’ ও ‘ভবিষ্যত’ কথাটির আরবি প্রতিশব্দের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে ‘নিওম’। একে মানব সভ্যতার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে জটিল প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আকাবা উপসাগর ও লোহিত সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত ২৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র এলাকাজুড়ে নতুন এ শহর নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার। ‘নিওম’ শহর প্রকল্পের তিনটি উপ-প্রকল্প রয়েছে – ‘ট্রোজেনা’, ‘অক্সাগন’ এবং ‘দ্য মিরর লাইন’।
‘ট্রোজেনা’ হবে একটি পার্বত্য অঞ্চল। এটি নিওম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হবে। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হবে এটি। যুবরাজের আশা, ‘ট্রোজেনা’ হবে পুরো বিশ্বের পর্বত পর্যটনের গন্তব্যস্থল। এখানে পর্যটকদের জন্য একটি স্কি ভিলেজ তৈরি করা হবে। ভোগ-বিলাসের অভাব থাকবে না। থাকবে হেল্থ রিসর্টও। মাউন্টেন বাইকিং ও কিছু কিছু জলক্রীড়ার মতো পরিষেবাও মিলবে।
নিওমের আরেকটি উপ-প্রকল্প হল ‘অক্সাগন’। এটা ‘বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান শিল্প কমপ্লেক্স’ হতে যাচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের আকারের ৩৩ গুণ বড় হবে। ‘অক্সাগন’, নিওম শহরকে একটি ‘নেট-জিরো শহর’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যপূরণ করবে।
‘নেট-জিরো শহর’ মানে এ শহরে ১০০ শতাংশ বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা মেটানো হবে নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে। পাশাপাশি এই শহরে ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ও রোবোটিক্সসহ আরও বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাবে। এখানে উড়ন্ত ট্যাক্সিও দেখা যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
‘দ্য মিরর লাইন’ হল নিওম স্মার্ট সিটির আরেকটি উপ-প্রকল্প। পরিবেশবান্ধব উপায়ে নগরোন্নয়ন করা হবে। রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবে না। দাবি করা হচ্ছে, মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটার মাধ্যমেই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারবেন বাসিন্দারা।
‘দ্য মিরর লাইন’শহর পরিচালনা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। শহরটি যাতে ‘কার্বন-পজিটিভ’ হয় এবং ১০০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি (দূষণহীণ শক্তি) ব্যবহার করে, তা নিশ্চিত করবে এইআই।