নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি লেনদেনকে আরও সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সেই ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছিল ৫২টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লাইসেন্স পেতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- নগদ ডিজিটাল ব্যাংক, কোরি ডিজিটাল ব্যাংক, বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক, ডিজি-টেন, ডিজিটঅল, স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক এবং নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো নগদ ডিজিটাল ব্যাংক এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক। এই দুটির পারফরম্যান্স দেখে বাকিগুলোকে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হবে। তারা ৬ মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে পারবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা দেয়ার পদ্ধতি
ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য শুধু প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা প্রদানে এই ব্যাংকের আর কোনো স্থাপনা, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি), শাখা, উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএম বুথ ছাড়াই পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর চলবে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। থাকবে না সশরীরে লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা। মোবাইল, অ্যাপনির্ভর আর ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারে গ্রাহকদের দেবে ব্যাংক সেবা।
সেবা মিলবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য চালু করতে পারবে। কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের গ্রাহকেরা অবশ্য অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ঋণপত্রও (এলসি) খুলতে পারবে না। শুধু ছোট ঋণ দেবে, বড় ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেয়া যাবে না। তবে আমানত নিতে কোনো বাধা নেই।
নতুন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে, প্রথাগত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগে ৫০০ কোটি টাকা।
নির্দেশিকায় বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকে প্রত্যেক স্পনসরের সর্বনিম্ন শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫০ লাখ টাকা (সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১২.৫ কোটি টাকা)।
ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালিত হবে ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত গাইডলাইন বা নির্দেশিকা অনুসারে।
এছাড়া ৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারী একটি স্পনসরকে যৌথভাবে ক্যাপিটাল মেইনটেন্যান্স চুক্তি (সিএমএ) স্বাক্ষর করতে হবে এবং ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কমে গেলে নানাভাবে বাড়তি মূলধন যোগান দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ধরনের মূলধন যোগান দিতে না পারলে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্পনসর গ্রুপের ব্যক্তিদের ওপর বর্তাবে।
বৈদেশিক লেনদেন হবে সীমিতভাবে
বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিমালায় অথোরাইজড ডিলার (এডি) লাইসেন্স নেয়ার সুযোগ রয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকের। লেনদেনের সব রেকর্ড সংরক্ষণ করে বৈদেশিক মুদ্রায় ফরেন ট্রেড ও গ্যারান্টি সার্ভিস ছাড়া সাধারণ লেনদেন করতে পারবে এ ধরনের ব্যাংক।
ডিজিটাল ব্যাংক কারও পক্ষে পেমেন্ট বা পরিশোধকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। বিদেশে লেখাপড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অনুমোদন সাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবে গ্রাহকের পক্ষে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে পারবে না এ ধরনের ব্যাংক।
এর বাইরে এ ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। প্রান্তিক ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে নীতিমালায়।
ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত জামানত রেখে ঋণ দিতে পারবে। ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংক চালুর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ১৫ জুন নীতিমালা জারি করা হয়। আগ্রহীদের লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দিতে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়। আবেদনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় গত ১ আগস্ট পর্যন্ত।
তবে নির্ধারিত সময়ে কোন আবেদন জমা না পড়ায় গত ৩০ জুলাই ডিজিটাল ব্যাংক খোলার আবেদনের সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেসময় জানানো হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদনের লক্ষ্যে সব আবেদনকারীর পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত প্রস্তাবনা তৈরি এবং বিভিন্ন দলিলাদি সংগ্রহের বিষয়টিও বিবেচনা করে আবেদনপত্র দাখিলের সময়সীমা বাড়ানো হয়।