জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিয়োগ-প্রক্রিয়াসহ চারটি সেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের সেবা আরও সহজ করার লক্ষ্যে ‘আমি প্রবাসী’ (Ami Probashi) অ্যাপের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে কর্মীদের বিদেশে পাঠাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। সেই সাথে শ্রম ও ব্যয়ও কমবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে এই কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এসব কথা বলেন।
বিএমইটির সেবা ডিজিটালাইজড করায় এখন থেকে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সেবা সহজীকরণ হবে। এতে একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী কর্মীর সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘বিএমইটির সেবা ডিজিটালাইজেশন শুনতে যতটা বড় মনে হচ্ছে, আমি মনে করি এর প্রভাব আরও বেশি পড়বে অভিবাসন খাতে। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। আজ প্রতীয়মান হচ্ছে যে আমরা কতটা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী আরও বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রীর) সঙ্গে হাত জুড়ে দিয়েছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তার বিদেশে অবস্থানের সুবাদে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছেন, নতুন নতুন আইডিয়া নিচ্ছেন এবং তা সব দেশের কাজে লাগাচ্ছেন।’
মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা যা কিছুই করি না কেন, আমাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যখনই আমরা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের কথা বলি, সেটাকে অংশীদারত্বই হতে হয়। সরকার সুযোগ দেয় কারণ তার সেবাটি প্রয়োজন। বিএমইটির একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। সেটি করেও থেমে থাকা যাবে না। আর এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সব সময় একজোট হয়ে কাজ করি। আমার কাজ কর্মীরদের বিদেশ পাঠানো। এখন আর এনালগ পদ্ধতিতে পাঠানো যাবে না, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠাতে হবে।’
কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর প্রক্রিয়া আমাদের ত্বরান্বিত করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটালাইজেশন আমাদের তাতে সহায়তা করবে এবং বিদেশে কর্মী পাঠানোর ধাপ কমে আসবে’।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন থেকে শুরু করে, চাকরি খোঁজা, রিক্রুটিং এজেন্সির সিলেকশন, বিদেশ যাওয়ার প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তিসহ বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির মাধ্যমে কিউ আর কোড সংবলিত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড পাওয়া যাবে।
এই অ্যাপের পক্ষ থেকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরিক ইকরামুল হক জানান, এখন পর্যন্ত এই অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ, বিএমইটির নিবন্ধন হয়েছে ১৮ লাখ এবং ৫০০-এর বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, ২ হাজারেরও বেশি কাজের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া এই অ্যাপের সহায়তায় ১৫ লাখ কর্মী টিকার জন্য রেজিস্ট্রশন করতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলাম কৃষি, পোশাক শিল্প, প্রবাসীদের মাধ্যমে। একদিকে প্রবাসী ভাই-বোনেরা আমাদের ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। অপর দিকে পোশাকশিল্প থেকে ভাই-বোন ৩০ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছেন। কৃষিতে সাড়ে ৩ কোটি শ্রমিক আমাদের অর্থনীতির মূল চলনশক্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মধ্যম আয়ের দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন দিয়েছেন, সেটি পূরণ করতে গেলে যদি আমাদের জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী অর্থনীতির দিকে যেতে হয়, তাহলে কিন্তু প্রযুক্তিকে আমাদের পোশাকশিল্প, প্রবাসী কর্মসংস্থানে ও কৃষিতেও ব্যবহার করতে হবে। তবেই আমরা স্মার্ট অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।’
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বিএমইটি মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম (এনডিসি), ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, বায়রার সভাপতি মো. আবুল বাসার, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।