আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: মৎস্য অধিদপ্তর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তরের এল,সি,এস এর আওতায় ৬৬লক্ষ টাকায় দুটি খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা ও পরস্পর যোগসাজশে পুকুর চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খাল এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষ খালি খাল ২টি খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান। ২০২১-২২অর্থবছরে তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খাল পুণ্য খননের জন্য দুটি অংশে ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু দুর্নীতি ঢাকতে প্রকল্প সাইনবোর্ডে শুধুমাত্র ১৭ লক্ষ টাকা ও দলনেতা স্থানীয় চেয়ারম্যান এর ঘনিষ্ঠ ভজন জনৈক আব্দুল আজিজের নাম লেখা থাকলেও তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
অনুরূপভাবে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষ খালি খাল দুটি অংশে ৩৩ লক্ষ্য টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্প সাইনবোর্ডে ১৭ লক্ষ টাকা ও দলনেতা আবু সাঈদ সরদার এর নাম লিখে প্রকল্প উদ্বোধন করার পরপরই সাইন বোর্ড আর খুঁজে পায়নি এলাকাবাসী।ও তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষ খালি খাল দুটি খননের জন্য ৬৬লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্প সাইনবোর্ডে দুটি খালে ৩৪লক্ষ টাকা জনগণকে দেখানো হয়। বাকি ওইটাকার কাজ না করে ভেকুর সাহায্যে নামমাত্র খনন করে অপকর্ম ঢাকতে দ্রুত খাল দুটিতে পানি তুলে জোয়ার ভাটায় চলমান করে দেয়। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এবং খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থলে এসে মাপ জরিপ করে বিষয়টি ধরা পড়ায় জনগণের চাপে পরে কেটে দেবে বলে চম্পট দিলেও আজও পর্যন্ত কারো খোঁজ মেলেনি বলে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান।
মঙ্গলবার দিনভর সরোজমিনে প্রথমে তারালী খলিশখালী খালে গেলে তারালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আলী, হরিদাস, জাফরপুর গ্রামের আশরাফুল এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের টোনা গ্রামের অনিমেষ, সান্তনু সরকার, নারায়ন সরকার, গোবিন্দ কাটি গ্রামের আশুতোষ সরকার, রামজয় সরকার, সহ শত শত গ্রামবাসী সাংবাদিকদের জানান ৫ হাজার 8 শত ফুট করে লম্বা দুটি খালের ৫০ ফুট চওড়া এবং ২৯ ফুট তলা ও ৬ ফিট গভীরতা করে খাল খননের কথা থাকলেও কোন মাপ জরিপ ছাড়া দায়সারাভাবে ভেকু দিয়ে খালের পাস কেটে দ্রুত পানি তুলে খাল ভর্তি করে দেয়। এছাড়াও গোমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে স্থানীয় কোন ভেকু ব্যবহার না করে যশোর থেকে দুটি খালে ২০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে কাজ সম্পন্ন করে বাকি ৪৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে গ্রামবাসী সাংবাদিকদের জানান। গত মার্চ মাসে ৭ তারিখ হতে কাজ শুরু করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও দুটি এক মাসের মধ্যে কাটা সম্পন্ন করে ফেলে।
প্রতিটি খালে ২০ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা করে মোট ৩০ জন সুফলভোগী দেখানো হলেও বাস্তবতার কোন খোঁজ মেলেনি। বর্তমান কালীগঞ্জ উপজেলা ৩টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্পের কাজ শেষ দেখানো হলেও বাকি এখনো তেত্রিশ লক্ষ টাকার রতনপুর ইউনিয়নের কল কলি খাল খনন চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় তিনটি খালে ৯৯ লক্ষ টাকা বা প্রায় ১কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। আর এই কাজের বাস্তবায়নে আছে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা এবং শিডিউলের বিষয় কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হক এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান এবং কোন সিডিউল বা বরাদ্দকৃত টাকার পরিমান জানাতে অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নিকট হতে জানার জন্য বলেন। মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন স্থানীয় আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলতে বলেন এবং আরো বলেন আমি গ্রামবাসী প্রতিবাদের মুখে খাল কেটে দেবো বলে বলে এসেছিলাম এখনো দেয়নি? প্রতিবাদকারী আশরাফুলের সদস্যদের নিয়ে মাপ জরিপ করে পরে কেটে দেবো বলে বলে এসেছি। তিনি আরো জানান ঢাকা মৎস্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে যারা এই প্রকল্পটি নিয়ে এসেছে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে এ কারণে একটু সমস্যা হতে পারে বুঝেন তো! আচ্ছা বিষয়টি আমি দেখছি প্রকল্প ২টির সাইনবোর্ডে দলনেতা হিসেবে তারালী ইউনিয়নের আব্দুল আজিজ এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের আবু সায়ীদ সরদার এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে আব্দুল আজিজ ছোট চেয়ারম্যানের নিকট কথা বলতে বলেন তিনি কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। আবু সাঈদ অনুরূপ কিছু জানেন না বলে চেয়ারম্যানের নিকট জিজ্ঞাসা করতে বলেন। এ ব্যাপারে দক্ষিণ শ্রীপুর পরিষদের চেয়ারম্যান গোবিন্দ মন্ডল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এ যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চা পানো ছাড়া আর কিছু না। এ প্রসঙ্গে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান,খাল খননের বিষয়টি মৎস্য অফিসের যদি কোন অনিয়ম দুর্নীতি ঘটে তাহলে আমার নিকট অভিযোগ দিতে বলেন। বিষয়টি মৎস্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের তদন্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।