অ্যাক্রিলামাইড (Acrylamide, C3H5ON) হল একটি অসম্পৃক্ত কার্বনিল গ্রুপ দিয়ে তৈরি একটি যৌগ । Acrylamide হল একটি রাসায়নিক যা উচ্চ-তাপমাত্রার রান্নার প্রক্রিয়ার (ভাজা, রোস্টিং এবং বেকিং) সময় কিছু খাবারে তৈরি হতে পারে । খাদ্য উপাদান যেমন শর্করা (গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ) ও অ্যামিনো অ্যাসিড (অ্যাসপারাজিন) যুক্ত খাবারকে উচ্চ-তাপমাত্রার রান্নার প্রক্রিয়ার সময় মাইলার্ড রিঅ্যাকশন এর বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে অ্যাক্রিলামাইড তৈরী হয়। অ্যাক্রিলামাইড সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় (120 °C এর উপরে) ভাজা, রোস্টিং এবং বেকিং করলে অ্যাক্রিলামাইড তৈরী হয় । এটি খাদ্য প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস বা পরিবেশ থেকে আসে না।
আবিষ্কার
সর্বপ্রথম 2002 সালে খাদ্যে অ্যাক্রিলামাইডের উপস্থিতি প্রকাশ পায় । এই আবিষ্কারটি বৈজ্ঞানিক জগতে ব্যাপক কৌতূহল জাগিয়েছিল ।
খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা
খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা অনেক কারণের উপর নির্ভর করে যেমন খাবারের ধরন এবং বিষয়বস্তু, প্রক্রিয়াকরণ কৌশল এবং স্টোরেজ অবস্থার উপর নির্ভর করে । খাবারে এর পরিমাণ নির্ধারণের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে খাওয়া খাবারে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায়, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা 779-1299 μg/kg পাওয়া গেছে এবং আলুর চিপসে 211-3515 μg/kg, যা অন্যান্য খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রার তুলনায় বেশ বেশি। অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা রুটিতে 31-454 μg/kg, কফিতে 135-1139 μg/kg, এবং পানীয় কফিতে 5.30-79.5 μg/kg, শিশুর বিস্কুটে 12.3-1270 μg/kg পাওয়া গেছে। যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
খাবারে নির্ধারিত মাত্রা
ইউরোপীয় ফুড সেফটি অথরিটি (EFSA) জানিয়েছে যে তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক, বয়স্ক গোষ্ঠীর মধ্যে গড় অ্যাক্রিলামাইড এক্সপোজার 0.4 থেকে 0.9 µg/kg bw/day এর মধ্যে। তাহলে ৬০ কেজি ওজনের একজন মানুষের দৈনিক ২৪ তো ৫৪ µg/day। পোলিশ খাবারের জন্য অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা <143 μg/kg এবং কিছু তুর্কি ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য 11.7-527 μg/kg নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের উপস্থিতি কি ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
অ্যাক্রিলামাইড রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হতে পারে । 1994 সালে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC) দ্বারা অ্যাক্রিলামাইডকে “মানুষের জন্য কার্সিনোজেনিক” যৌগ হিসাবে চিহ্নিত করা । ইউরোপীয় কমিশন অ্যাক্রিলামাইডকে 1B ক্যাটাগরির কার্সিনোজেন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। ইউরোপীয় কেমিক্যাল এজেন্সি (2022) অত্যন্ত উচ্চ উদ্বেগের পদার্থের তালিকায় অ্যাক্রিলামাইড অন্তর্ভুক্ত করেছে ।
কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে, আলুর চিপসে, টোস্ট, পিজ্জা, বার্গার, পাউরুটি, কেক, কফিতে, বিস্কুটে মাত্রারিক্ত অ্যাক্রিলামাইডের উপস্থতি পাওয়া গেছে, তাই এই খাবার গুলোকে এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।
লেখক:
জুয়েল রানা।
সিনিয়র লেকচারার
ডিপার্টমেন্ট অফ নিউট্রিশন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।