Thursday , 2 May 2024
শিরোনাম

আগুন নিয়ে বিজিএমইএর সতর্কতা

বাড়তে থাকা তাপমাত্রার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ কিছু আগুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে এ খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান সদস্যদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়ে সতর্ক থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমে আবহাওয়ার উষ্ণতা ও অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত অগ্নি দুর্ঘটনাসহ বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিজিএমইএ’র দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা অন্য কোনো বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

পোশাক কারখানায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় জানিয়ে বার্তায় তিনি অগ্নি দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেন। এজন্য অগ্নি দুর্ঘটনার বিষয়ে অধিক সচেতন হলে এবং কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে বার্তায় জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

দেশের শিল্প কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডগুলোর মধ্যে পোশাক কারখানায় বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক দশকে, যেগুলোতে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। এসব দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ব্যাপক সংস্কার চালানো হয়। বিজিএমইএ, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন চালানো হয়। এরপর অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে এসেছে।

সোমবার পাঁচ দশকের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রিতে। টানা ১৫ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলতে থাকার মধ্যে এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগের কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়; সোমবার সেখানকার তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন ঢাকার তামপাত্রা কিছুটা কমলেও আগের দিন তা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে; যা ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

থার্মোমিটারের পারদ গত কয়েকদিন এমন চড়ার মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বঙ্গবাজারসহ তিনটি বিপণি কেন্দ্রে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। বছরের সবচেয়ে বড় কেনাবেচার এ মৌসুমে আগুনে পুড়ে গেছে ঈদের আগে দোকানে তোলা মালামালাসহ বিপুল পণ্য।

এমন প্রেক্ষাপটে অগ্নি সতর্কতা নিয়ে বিজিএমইএর বার্তায় বলা হয়েছে, “বিশেষ করে কারখানার বয়লার, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ অতিরিক্তি উত্তপ্ত হয়ে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

“পাশাপাশি ঝড় ও বৃষ্টির মৌসুমে বিদ্যুতের তারের সংযোগস্থল নড়বড়ে হলে সেখানে পানি লেগে স্পার্ক করে আগুন লেগে যেতে পারে। কারখানায় পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।”

পরামর্শে যা করতে বলা হয়েছে

১. রাতে কারখানা বন্ধ করার আগে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে সব মেশিনারিজ, লাইট, ফ্যান, আয়রন ইত্যাদি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ, বয়লার ইত্যাদি বন্ধ করা।

২. কারখানার সব বৈদ্যুতিক তার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কারখানার বয়লার ও বিভিন্ন ধরনের মেশিন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ একজন প্রকৌশলী দিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করানো।

৩. কারখানার সিঁড়ি এবং চলাচলের পথ বাধামুক্ত রাখা এবং কর্মকালীন সময়ে সার্বক্ষণিকভাবে ফ্লোরের গেইট, মেইন গেইট এবং সমস্ত সিঁড়ির গেট খোলা রাখা।

৪. অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় কারখানায় প্রশিক্ষিত লোকের ব্যবস্থা রাখা। পুরো কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়নের জন্য সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে প্রশিক্ষিত সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত রাখা।

৫. তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানোর জন্য কারখানায় প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্ৰ, পানি ভর্তি ড্রাম ও বালতি এবং হোজ রিল/হাইড্রেন্ট রাখা এবং এগুলো সার্বক্ষণিক কার্যকরী রাখা।

৬. কারখানার বৈদ্যুতিক চ্যানেলগুলো সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং কোথাও কোন ঝুট বা ময়লা জমিয়ে না রাখা। সব মালামাল বৈদ্যুতিক স্থাপনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

৭. কোনো অবস্থাতেই কারখানার ফ্লোরে কেমিকেল, প্লাস্টিক বা অন্য কোনো অতি দাহ্যবস্তু সংরক্ষণ না করা।

৮. সাবোটাজ বা শত্রুতামূলক আগুন প্রতিরোধের জন্য কারখানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রাখা এবং সেগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু রাখার ব্যবস্থা করা; প্রয়োজনে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করা।

৯. কারখানার ফ্লোরে এবং সিঁড়িতে অবশ্যই বিকল্প জরুরি বাতি (আইপিএস/চার্জার/ব্যাটারি চালিত বাতি) এবং ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা এবং এগুলো কাজের উপযোগী আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করা।

১০. দুর্ঘটনায় যাতে পদদলিত হয়ে কোন শ্রমিক/কর্মচারী হতাহত না হয় সেজন্য কারখানায় নিয়মিত বহির্গমন মহড়া পরিচালনা করে তার রেকর্ড সংরক্ষণ করা।

১১. কারখানায় আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস (০২-২২৩৩৫৫৫৫৫) এবং বিজিএমইএ’র ফায়ার ইমার্জেন্সি পুল এর জরুরি নম্বর- ০১৯১৩-৫২৯৮৬৭ এ ফোন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেওয়া।

Check Also

সোনার দাম আরও কমল

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের সোনার ভরিতে ২ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x