Friday , 3 May 2024
শিরোনাম

আল্লাহর নিয়ামতে ভরা শীতকাল

শীতের এই ঋতুতে মহান আল্লাহর অনন্য নিয়ামত নতুন শাকসবজি আর ফলমূলে ভরে যায় গ্রামের মাঠ। মেঠোপথ ধরে চলতে গিয়ে চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজের সেই সমারোহ দেখে। বিস্তীর্ণ জমিতে ছড়িয়ে থাকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রকোলি, গাজর, শালগম, টমেটো, শিম, চীনা বাঁধাকপি, লাল বাঁধাকপি, ফ্রেঞ্চ বিনসহ নানা ধরনের সবজি। শাকের মধ্যে থাকে লালশাক, পালংশাক, ঢেঁকিশাক, মুলাশাক ইত্যাদি। আর এ সব কিছুই আল্লাহ তাআলার অশেষ দান।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমি তো অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফলফলাদি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)

শীতের শিশিরে সবজি থাকে টাটকা। শাকসবজি যত টাটকা খাওয়া যায়, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি পাওয়া যায়। ক্ষেত থেকে তোলার পরই সবজির অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে থাকে। যেমন—টমেটো ক্ষেত থেকে তোলার তিন দিনের মধ্যে তার ভিটামিন ‘সি’ প্রায় অর্ধেক কমে যায়। তাই আমরা যে সবজিই খাই না কেন, তা যেন থাকে সতেজ ও টাটকা। শীতকালে শাকসবজিতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম থাকায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানো হয় কম। তাই শীতকালের সবজিতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম থাকে।

শীতের আরেকটি অন্যতম নিয়ামত হলো খেজুর রস। শীতকালের সঙ্গে খেজুর রস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেন একে অন্যের পরম বন্ধু। কনকনে শীতের সকালে এক গ্লাস ঠাণ্ডা রস শরীরে এনে দেয় সজীবতা। গ্রামে শীতকালের সকালটা খেজুর রস ছাড়া যেন জমেই না। স্বাদে আর গন্ধে এককথায় অমৃত। পাখিরাও সে স্বাদ উপভোগ করা থেকে বাদ যায় না। মাটির হাঁড়িতে সরু ঠোঁট লাগিয়ে চুকচুক করে পান করে সুমিষ্ট রস। পবিত্র কোরআনে ২৬ বার খেজুরের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবার এই পবিত্র কোরআন প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুরের পাতায়।

শীতের সময়টা কিন্তু ইবাদতের জন্যও অনেক বড় নিয়ামতের। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল।’ আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৫)

শীতকালে দিন অনেকটা ছোট থাকায় রোজা রাখতে খুব একটা কষ্ট হয় না। কারো যদি কাজা রোজা থাকে, তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করে নেওয়া সহজ। তা ছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি এক দিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৪০)

শীতকালে রাত বেশ লম্বা হয়। কেউ চাইলে শরীরের চাহিদামতো ঘুমিয়ে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৬) মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়াতু ইলয়াস, আল ইসলামিয়া টঙ্গী, গাজীপুর। সূত্রঃ কালেরকন্ঠ।

Check Also

নরসিংদীতে গারদে আটক বন্দীকে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ নরসিংদী জেলা নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত গারদখানার এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x