ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনী ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে- পশ্চিমা বিশ্বের এমন অভিযোগের মধ্যেই সামনে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, এবার নিজের তৈরি ভয়ঙ্কর আর নিঃশব্দ এক ড্রোন ব্যবহার করে অব্যর্থ হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
ড্রোনটির নাম ‘কুবা’। এই ড্রোনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। কারণ স্বয়ংক্রিয় এই ড্রোনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাদের আকাশ নিরাপত্তা প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
‘কামিকাজে ইউএভি’ ধরনের ড্রোনটি রাশিয়ান সামরিক বাহিনী পুরো ফ্রন্টলাইনে ব্যবহার করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইউরএশিয়ান টাইমস।
খবরে বলা হয়েছে, আর্টিলারি ফায়ারের পাশাপাশি ড্রোনের ওপর রাশিয়া নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। এটি রুশ সামরিক কৌশলের পরিবর্তনের সম্ভাব্য ইঙ্গিত। গত রোববার (২৮ অক্টোবর) ইজভেস্টিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়ান এয়ারবর্ন ফোর্সেস (ভিডিভি) ইউনিট ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর (এএফইউ) কর্মীদের আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস করতে কুবা ড্রোন ব্যবহার করছে। রাশিয়ান বাহিনী প্রথমে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও চিহ্নিত করতে একটি রিকনেসান্স ড্রোন চালু করে। পরে তারা উচ্চ-বিস্ফোরক ফ্র্যাগমেন্টেশন ওয়ারহেড লাগানো কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করে।
রাশিয়ান এয়ারবর্ন ফোর্সেস ইউনিট কমান্ডারের মতে, আর্টিলারি একটি বিস্তৃত অঞ্চলে আগুনে ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া প্রচুর গোলাবারুদ ব্যয় হয়। তবে কুবা ড্রোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে নির্ভুলভাবে।
যেকোনো জায়গা থেকে এ ড্রোন ব্যবহার করা যায়। ড্রোন পরিচালনাকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিপক্ষের আর্টিলারি রেঞ্জের বাইরের একটি অবস্থান থেকে এসব ওড়ানো হয়। এটি পাখির মতো নিঃশব্দে উড়ে যায়। তা ছাড়া রকেট সহায়তা না থাকায় এটি শনাক্ত করা কঠিন।
রাশিয়ার কুবা ড্রোনগুলো যা কালাশনিকভ গ্রুপ অব কোম্পানির অংশ। একেকটি ড্রোনের ওজন মাত্র ৩ কেজি। ওয়ারহেডসহ একটি অপেক্ষাকৃত ছোট (১ দশমিক ২ মিটার উইংস্প্যান) ড্রোনটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। টানা ত্রিশ মিনিট এসব ড্রোন আকাশে ভেসে থাকতে পারে।
এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্টিলথ ডিজাইন, শব্দ না করে দীর্ঘক্ষণ ওড়ার ক্ষমতা, এআই ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্ভুল লক্ষ্য চিহ্নিত করা। ড্রোনগুলো ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে নির্ভুল লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত ড্রোনগুলো ব্যবহারও সহজ।
এসব ড্রোন লুকানো ভূখণ্ড নির্বিশেষে উঁচু-নিচু উচ্চতায় কাজ করতে সক্ষম। তাছাড়া বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা জায়গা শনাক্ত করে দ্রুত আঘাতহানতে পারে।
নির্ধারিত এলাকায় পরিচালিত এসব ড্রোন প্রতিপক্ষ খুব কমই পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তা ছাড়া এর অ্যারো ডাইনামিক শেপিংয়ের কারণে রাডারও শনাক্ত করতে পারে না সহজে।
রুশ বাহিনী একই সময় ইউক্রেনের কয়েকটি স্থানে আক্রমণের জন্য অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই থেকে তিনটি ড্রোন ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের প্রধান মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরুর পর ও তার পরবর্তী সময় রাশিয়া কুবা ড্রোন ব্যবহার করেছিল। এমন কয়েকটি রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
নতুন করে কুবা ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় রুশদের হামলার ব্যাপারে ইউক্রেন এখনও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
সূত্র: দ্য ইউরএশিয়ান টাইমস