Sunday , 28 April 2024
শিরোনাম

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর,ময়মনসিংহঃজাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাগত জানিয়েছে বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে।’অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মহামারীর মন্দ সময় পেরিয়ে জীবনের চেনা ছন্দে ফিরছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছে চারুকলা অনুষদ। নতুন বছর শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রভাতী পরিবেশনার মধ্যদিয়ে।
শিক্ষার্থীরা নাচ-গানে পহেলা দিনের সকালটাকে মুখরিত করে তোলে। জাতীয় সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও রবীন্দ্রগীতির তাল ও ছন্দে উপস্থিত দর্শনার্থীরাও নেচে গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান।
এসময় এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাঙালি জাতির ঐহিত্যই হলো অগ্রগতি, পরম্পরা, বাঙালি জাতির ঐতিহ্য হলো নিজের অস্তিত্ব টিকেয়ে রেখে অন্যকে গ্রহণ করা।
সেদিক থেকে বাংলা নববর্ষ আমাদের জানান দেয়, বহুকাল ধরে যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতির ধারকবাহক হিসেবে বাঙালি জাতির অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে বিশ্বায়নের দরুণ আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে সুযোগ আমাদের এসেছে সেটি আমরা যথাযথভাবে করতে পারি।
ইতোমধ্যে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এটিই আমাদের শ্লাঘার বিষয় নয়। আমাদের সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিকভাবে এখনো তুলে ধরতে পারি, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
উপাচার্য বলেন, পৃথিবীর বহু জাতির ক্যালেন্ডার নেই। বাঙালি জাতির ক্যালেন্ডার রয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি যে সুশৃক্সখল, একটি পরম্পরার জাতি তার প্রমাণ এই ক্যালেন্ডার।
আকাশ থেকে এই ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জিকা এসে পড়েনি। বরং বাংলা মাসের নামকরণ হয়েছে নক্ষত্র গমনাগমনের উপর ভিত্তি করে। এই সব ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলা নববর্ষ বহু পুরনো। এর ধারাবাহিকতা আজকের নয়। বাঙালি যে বহু আগের জাতি, বাঙালি যে ভূঁইফোড় নয়, বাঙালি যে দুই-চারশ বছর আগের জাতিমাত্র নয় তার প্রমাণ আমাদের যে সংস্কৃতিক উপাদান বর্ষ পঞ্জিকা সেটি দেখলেই বুঝতে পারি। সুদীর্ঘকাল ধরে এই বাঙালি জাতি এই সবুজ বদ্বীপে প্রীতি, সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় বহুল আকাক্সিক্ষত মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রাটি ভিসি বাংলোর সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভিসি বাংলোর সামনে গিয়েই শেষ হয়। বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রায় সামনে-পেছনে বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। পুষ্পাকৃতির চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আহমেদুল বারী, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) তপন কুমার সরকার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী, সাধারণ সম্পাদক তুহিনুর রহমান, উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. এমদাদুর রাশেদ সুখন, সদস্য সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন, সাধারন সম্পাদক রামিম আল করিম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুসহ অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় এবারের বৈশাখী উৎসব সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংক্ষিপ্ত আকারে দুপুরে বৈশাখী পালা নাটক ও উদিচীর পরিবেশনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গাহি সাম্যের গান মঞ্চের সামনে ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর ফানুস উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন।

Check Also

‘ঢাকার তাপমাত্রা বিবেচনা করে সারা দেশের বিদ্যালয় বন্ধ করা যুক্তিযুক্ত নয়’

ঢাকার বর্তমান তাপমাত্রা বিবেচনা করে সারা দেশের বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার মানসিকতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x