Monday , 20 May 2024
শিরোনাম

জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখায় গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা উধাও!

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর শহরের দ্বারিয়াপুরে অবস্থিত জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার শতাধিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে রহস্যজনকভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে।

জানা যায়, রবিবার (৯ জুলাই) সকালে ২০/২৫ জন গ্রাহক তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে যান। এ সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে জানায়। এতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এ খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে কয়েক শ গ্রাহক ব্যাংকে এসে ভিড় জমায় ও খোয়া যাওয়া টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে ব্যাংক ঘেরাও করে। ফলে ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে গ্রাহক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের ভিড় জমে। এ সময় গ্রাহকদের মাঝে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

অভিযোগকারীরা জানায়, এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে গ্রাহকরা ব্যাংক এলাকা ত্যাগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংক থেকে সটকে পড়েন। এ সময় তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেল পর্যন্ত তাকে একাধিক বার কল করেও পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন ব্যাংকের কেউ তা বলতে পারেনি। অপরদিকে ঘটনার পর থেকে এ ব্যাংকের অস্থায়ী অফিস সহকারী কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী আওলাদ হোসেন আকন্দ রঞ্জু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উধাও রয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করছেন। উধাও রঞ্জু শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের পাড়কোলা গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনা তদন্তে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এদিন বিকেলে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখায় উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের এসপিও মো. আসাদুজ্জামান, পিও মো. মনিরুজ্জামান, পিও মো. শাহ আলম সিদ্দিকী ও আইটি শাখার সিনিয়র অফিসার ওমর ফারুক।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলম বলেন, আমিও এসে ম্যানেজারকে পাইনি। হয়তো তিনি কোনো কারণে বাইরে আছেন। উনি আসবেন ও মোবাইলও খুলবেন।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনা ব্যাংকের বাইরে ঘটেছে। ব্যাংকের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন। তদন্তে যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কতজন গ্রাহকের টাকা খোয়া গেছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৮/১০ জনের মতো হবে।

তারা টাকার পরিমাণও জানাননি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পিয়ন রঞ্জুকে ধরতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি অচিরেই তাকে ধরা সম্ভব হবে। তাকে ধরতে পারলে সঠিক তথ্য বেড়িয়ে আসবে।

এ বিষয়ে গ্রাহক বাচামারা গ্রামের রজিনা খাতুন জানান তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা, আফরোজা বেগম জানান, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ, প্রাণনাথপুর গ্রামের মহিতন খাতুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজার, বাচামারা গ্রামের আবু হানিফ খানের ৫ লাখ টাকা, টিয়ারবন্দর গ্রামের মোছা. শিখা খাতুনের ১ লাখ ৯০ হাজার, মাকড়কোলা গ্রামের সুজন মিয়ার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার, বাড়াবিল গ্রামের আব্দুল গফুরের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার, প্রাণনাথপুর গ্রামের মোছা. লাভলী খাতুনের ৮ লাখ ৩০ হাজার ৬২২ টাকা, বাচামারা গ্রামের মোছা. মনোয়ারা খাতুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৫ টাকা উধাও হয়ে গেছে।

তারা জানান, আরো বেশ কয়েকজন গ্রাহক তাদের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। সব মিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকা উধাও হয়েছে।

তাদের দাবি ব্যাংকের বড় কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে রঞ্জুর মতো একজন পিয়নের পক্ষে একা জালিয়াতি করে এত টাকা আত্মসাৎ সম্ভব না। তারা এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ছাড়া অবিলম্বে তাদের খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার অস্থায়ী পিয়ন কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী আওলাদ হোসেন আকন্দ রঞ্জুর মা আনোয়ারা বেগম ও ভাতিজি জান্নাতি খাতুন বলেন, এ ঘটনায় রঞ্জুকে ফাঁসানো হয়েছে। বিষয়টি এ ব্যাংকের ম্যানেজারসহ সবাই জানে। বৃহস্পতিবার অফিস সহকারী কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী আওলাদ হোসেন আকন্দ রঞ্জু অফিসে গেলে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম তাকে ১৫ দিনের ছুটি দিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে বলে। সেই থেকে তিনি উধাও রয়েছেন। কোথায় গেছে তা আমাদের জানা নেই।

তারা বলেন, রঞ্জু ওই ব্যাংকের অফিস সহকারী হলেও সে ২০ বছর ধরে কোট-প্যান্ট-টাই পরে বড় সাহেবের মতো চেয়ার-টেবিলে বসে অফিস করত। সে যে টেবিলে বসতো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে সেই টেবিল-চেয়ার ওই স্থান থেকে সরিয়ে ফেলেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম বলেন, ও চেয়ার-টেবিলের যোগ্য না। তাই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাহলে এত দিন বসতে দিয়েছেন কেন তার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

তারা আরো বলেন, এ ঘটনার জন্য রঞ্জুকে একক ভাবে দায়ী করা হলে আমরা ব্যাংকের সবার বিরুদ্ধে মামলা করব।

এ বিষয়ে রঞ্জুর শ্যালক ইসরাফিল শেখ বলেন, রঞ্জু উধাও হওয়ার পর রঞ্জুর স্ত্রী শাকিলা খাতুন তার আট বছর বয়সী এক মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু টাকার জন্য গ্রাহকরা আমাদের বাড়িতে এসে ভিড় জমায় ও ঝামেলা শুরু করে। ফলে গত ৪/৫ দিন ধরে রঞ্জুর স্ত্রী শাকিলা খাতুন তার মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেছে। তারা কোথায় গেছে তা আমাদের জানা নেই।

তিনি দাবি করেন, এই টাকা আত্মসাতের জন্য তার ভগ্নিপতি একা দায়ী নন। এ ব্যাংকের অনেকেই জড়িত।

তিনি বলেন, রঞ্জু এক মাস আগে প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকায় তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে এসেছে। সে মাঝে মাঝে ওই কর্তার বাসায় বড় বড় মাছ ও কাপড়-চোপড় নিয়ে দিয়ে আসে। নিজেকে এক এমডির আত্মীয় পরিচয় দিত। ওই এমডির ভয়ে ব্যাংকের কেউ তাকে কিছু বলতে সাহস পেত না।

তিনি বলেন, ওই এমডির নাম তার জানা নেই। তিনি (রঞ্জু) চাকরি দেওয়ার কথা বলেও অনেকের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি সব-সময় চলা ফেরা করতেন প্রাইভেটকারে। তার ভয়ে আমরা এত দিন মুখ খুলতে সাহস পাইনি। তিনি আমার কাছে থেকে গরু বিক্রির ৮০ হাজার টাকা ও সমিতি থেকে তোলা ঋণের ১ লাখ টাকা তাকে দিতে বাধ্য করেন। এখন তিনি এ টাকা ফেরত না পেলে আমি পথে বসে যাব।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখা ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পিয়ন রঞ্জু আকন্দ ব্যাংকের নকল সিল তৈরি করে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া তিনি ব্যাংকের এমডির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ব্যাংকের সবাইকে জিম্মি করে অপকর্ম করেছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম মৃধা বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x