আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরো: রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পাশে সাড়ে ৪ একর জমিতে ২০১১ সালে দেশিও মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের চাষ শুরু করেন মিজানুর রহমান। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল এই মাছের চাষ করবেন তিনি । প্রথম দিকে কেউ বুঝতে পারেনি তার এই মাছের চাষ । এখন মাছের চাষ ভালো হওয়ায় দেখতে আসে অনেক দুর থেকে মানুষজন। পরামর্শ নেন তার কাছে। কিভাবে বৃদ্ধি করা যাবে মাছের উৎপাদন। গতকাল বুধবার সকালে কাউনিয়া উপজেলার চর গনাই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পাশে গড়ে তুলেছেন মাছের চাষ। যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হচ্ছেন বলে মনে করছেন মৎস্য চাষী মিজানুর রহমান। মিজানুরের মাছের উৎপাদন দেখে এ পযন্ত রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা,গংগাচড়াসহ কয়েকটি উপজেলার তরুণ প্রজন্মের যুবক গড়ে তুলেছেন মাছের খামার। মিজানুর রহমান চাকরি ছেড়ে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন মাছের চাষ। প্রত্যেক বছর মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে তার আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন তিনি দেশিও মাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এলাকাবাসীকে। সরকারি পৃষ্ঠাপোষকতা পেলে এগিয়ে যাবে এই মাছ চাষী। স্থানীয় ভাবে আমিশের চাহিদা পূরণ করে সরবরাহ করেন দেশের বিভিন্ন স্থানে । মাছ চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মিজানুর রহমান। সাফল্য পেয়েছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুরের মৎস্য চাষী মিজানুর রহমান। তার এই সাফল্যের পিছনে সহযোগিতা করেছেন বাবা আব্দুল হাই। এদিকে মাছের চাষের পাশাপাশি বেসকিছু দিন থেকে গড়ে তুলেছেন গরু- ছাগল ও দেশি মুরগির খামার। এই মাছের চাষ ও মুরগির খামার থেকে বছরে ১৫ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। চর গনাই গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা চেরের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর শীল। এই মাছের চাষ দেখে আমরা আনন্দিত । মিজানের মতো সবাইকে জেনো খামার করে নিজের ভাগ্যেে চাকা পরিবর্তন করতে পারে। মিঠাপুকুর থেকে দেখতে আশা মাসুদ রানা বলেন, লেখাপড়া করে বেকার জীবন পার করছি। এখানে এসে মাছের চাষ দেখে আক থেকে চাকরির পিছনে আর না ঘুরে আমিও মাছের চাষ করব। স্থানীয়রা বলছেন, আমরা রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময় দেখেছি মিজানুর অনেক কষ্ট করে এই মাছের উৎপাদন করছে। তার এই মাছ চাষ দেখে চাকরির পিছনে না ছুটে অনেক বেকার যুবক নতুন করে শুরু করেছে দেশি মাছের চাষ। জানা গেছে, দীর্ঘ এক যুগ এর বেশি সময় ধরে মাছ চাষ করছেন মিজানুর রহমান । মাছ চাষ শুরুর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তার সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই অনুসরণ করছেন। বাবা আব্দুল হাই ফ্যামেলি প্লানিং অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি চাকরি শেষে অবসর সময় মিজানুরের উৎসাহে পাঁচটি পুকুর নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। নিজের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে চাষ করে পরিচিতি পান তিনি। তার এ কাজে সফলতা পেতে বেশি সময় লাগেনি। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগিতা পায়নি মিজানুর রহমান। তিনি তবে সহযোগিতা পেলে আরো ভালো কিছু করতে পারবে এমনটাই জানাই এই মৎস্য খামারি। সফল মৎস্য খামারী মিজানুর রহমান বলেন, হাইস্কুল জীবনে আমার স্বপ্ন ছিল মাছের চাষ করার। সেই স্বপ্ন পুরণের লক্ষে কাজ করছি। আমি মনে করি এই সমাজের বুকে যারা বেকার যুবক ভাই বোন আছে তারাও আমার মতো খামার করে নিজের জীবনমান উন্নয়ন করবে। পাশাপাশি বেকারত্ব দুর করা সম্ভব হবে। মৎস্য অফিসের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় ৮ শত মাছের খামার আছে। তাদের সরকারি সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এদিকে মাছ চাষের ব্যাপারে সকল প্রকার সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা মৎস্য অধিদফতরের ওই কর্মকর্তা। রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান মানিক বলেছেন, রংপুরে আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষে কাজ করছি। সবাইকে মাছের চাষ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে আগের তুলনায় মাছের চাষ অনেকটা বৃদ্ধি করতে পারি। বিভিন্ন জায়গায় বিল নার্সারী করেছি। এবার আমরা মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি। পাশাপাশি দেশি মাছ চাষ করে রংপুরে আমিষের পূরন করে দেশের বাহিরে রপ্তানি করতে পারবো। বর্তমানে সাড়ে চার একর জমির ওপর পাঁচটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুর গুলোতে দেশি মাছ, শিংগি,কই,গোলসা টেংনা,পাবদা,তেলাপিয়া থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মিরগেল, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন মিজানুর রহমান। তার খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এলাকার বেশ কিছু মানুষ। মাছ চাষ করে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।