মুহাম্মদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে বান্দরবানের ২৩০টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির (উপজাতি) ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছেন ‘মাচাং ঘর’। পার্বত্য চট্টগ্রামের (এলাকার) ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে সঙ্গতি রেখে এসব মাচাং ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি মাচাংঘর নির্মাণের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭০ টাকা। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে এসব মাচাং ঘর নির্মাণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধিদল বান্দরবান পরিদর্শন শেষে মাচাংঘর নির্মাণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় এনে বিষয়টি অনুমোদন করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভূমিহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় বর্তমানে বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯টি, আলীকদম উপজেলায় ১টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৫টি রোয়াংছড়ি উপজেলার ৪৫টি, লামা উপজেলায় ১৫টি, রুমা উপজেলায় ১০০টি এবং থানচি উপজেলায় ৪৫টি মাচাংঘর নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে চার হাজার ১৩৩টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৫৬০টি গৃহনির্মাণের জন্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দু হাজার ৯৬৮টি সেমিপাকা ঘর ভূমিহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩০টি মাচাংঘরসহ সর্বমোট ৫৯২টি গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এদিকে পাহাড়িদের জন্য সেমিপাকা গৃহের পরিবর্তে মাচাংঘর নির্মাণের উদ্যোগটি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। সম্প্রতি কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো সারাদেশে একই নকশায় নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বান্দরবান তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির (উপজাতি/পাহাড়ি) লোকজন নিজ এলাকার ঐতিহ্য অনুযায়ী ঘর পেলে খুশি হয়। তাই এলাকার ঐতিহ্যর সাথে মিল রেখে ‘মাচাংঘর’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
বান্দরবান সদর উপজেলার ৬নং জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যসিংশৈ মারমা জানান, প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি জনগণ সেমিপাকা ঘরের চেয়ে মাচাংঘরকে বেশি পছন্দ করছেন। এতে মাচাং এর নীচে গৃহ পালিত পশু পালনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। দুর্যোগ সহনীয় ও পরিবেশবান্ধব এ মাচাংঘরে আলো বাতাস চলাচলের অবারিত সুযোগ রয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, তাঁর ইউনিয়ন পরিষদে সর্বপ্রথম মডেল হিসেবে নির্মিত হচ্ছে মাচাংঘর। তবে এ খাতে সরকারি বরাদ্দ যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, একটি টেকসই মাচাংঘর নির্মাণের জন্য কমপক্ষে চার লাখ টাকা বরাদ্দ করা প্রয়োজন। চার লাখ টাকা হলে সুন্দর ও টেকসই মাচাংঘর নির্মাণ করা সম্ভব।