Friday , 3 May 2024
শিরোনাম

বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিন বাতিল করছে চীন

বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের বিধি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে চীন। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে এ বিধি আর কার্যকর থাকবে না। এর ফলে তিন বছর সীমান্ত বন্ধ রাখা দেশটি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্যত কাজ করতে, পড়তে কিংবা পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে ইচ্ছুকদের জন্য চীনের দ্বার উন্মুক্ত করে দিল।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি এমন এক সময়ে এ বিধান তুলে নিচ্ছে, যখন ভাইরাস মোকাবেলায় দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধ তোলায় দেশটির বিভিন্ন এলাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে।

রোগীর চাপে দেশটির হাসপাতালগুলোর হিমশিম খাওয়া এবং বয়স্কদের মৃত্যুর খবরও আসছে।

চীনের স্বাস্থ্য কমিশন তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশটিতে সরকারি হিসাবে দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যুর সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না।

বেইজিং শুক্রবার দেশটিতে নতুন ৪ হাজার আক্রান্ত এবং গত সপ্তাহের টানা চারদিন কেউ কোভিডে মারা যায়নি বলে জানিয়েছিল।

রোববার তারা জানায়, তারা আর সব এলাকার দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যু একসঙ্গে প্রকাশ করবে না।

তবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য তথ্য কোম্পানি এয়ারফিনিটির অনুমান, চীনে এখন কোভিডে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ৫ হাজার মৃত্যু হচ্ছে।

বছর তিনেক লকডাউন, সীমানা বন্ধ রাখা এবং কোভিড আক্রান্ত ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার পর চীন এখন ‘কোভিডকে সঙ্গী করে জীবনযাপনের’ পথ বেছে নিচ্ছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে তারাই সর্বশেষ এ পথে এলো।

তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতি অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে, কঠোর সব বিধিনিষেধ ও বারবার শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নাগরিকরা হয়েছে বিরক্ত, ক্লান্ত।

এগুলো নিয়ে অসন্তোষের এক পর্যায়ে নভেম্বরে দেশটির বেশ কয়েকটি শহর কোভিডবিধি ও শি জিনপিংয়ের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভও দেখেছে। ওই বিক্ষোভের কয়েক সপ্তাহ পরেই চীন একে একে বিধিনিষেধ তোলা শুরু করে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে চীনে প্রবেশ করা সবার সরকারি স্থাপনায় বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার বিধান চালু হয়; এক সময় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকা লাগতো, সম্প্রতি তা কমিয়ে ৫দিনে নিয়ে আসা হয়েছে।

সোমবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ৮ জানুয়ারি থেকে কোভিড ‘বি শ্রেণির সংক্রামক রোগ’ হিসেবে গণ্য হবে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর ওই বিধিনিষেধ পুরোপুরিই বাদ হয়ে গেল।

তবে এরপরও চীনে প্রবেশে পিসিআর টেস্টের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। চীনে এতদিন দৈনিক কত ফ্লাইট নামবে তার একটা সীমাও নি্ধারিত ছিল, স্বাস্থ্য কমিশনের নতুন ঘোষণায় তাও বাতিল হল।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা চীনে কাজ করতে, পড়তে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাওয়াদের ভিসা পাওয়ার সুযোগ বাড়াবে।

এই তালিকায় দেশটিতে বেড়াতে যেতে চাওয়ারা পড়বে কিনা, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, তারা পর্যটকবাহী জাহাজ নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প চালিয়ে দেখবেন।

নতুন এ ঘোষণা চীনের অনেককেই উদ্বেলিত করেছে, তারা এখন দ্বিধাহীনভাবেই বিদেশে ঘুরতে যেতে পারবেন।

স্বাস্থ্য কমিশনের ওই ঘোষণার কয়েকঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় ফ্লাইট বুকিং ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের আনাগোনাও ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

কিন্তু চীনের এখনকার সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চীনের সীমান্ত এমনভাবে খুলে দেওয়া নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্নও।

বেইজিং ও সাংহাইয়ের মতো অনেক শহরের বাসিন্দারাই ঠাণ্ডা ও সর্দিকাশির ওষুধের ঘাটতির কথা জানাচ্ছেন, অসুস্থ আত্মীয়ের জন্য সহায়তা চেয়ে তাদের আকুতিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকট হয়ে উঠছে। দেশটির শবাগারগুলোতেও চাপ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে করা প্রথম মন্তব্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জীবন বাঁচাতে ‘সম্ভব সব কিছু’ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

মহামারী নিয়ন্ত্রণের নতুন পরিস্থিতির মুখে দেশ, দরকার আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, শি এমনটাই বলেছেন বলে তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

Check Also

নরসিংদীতে গারদে আটক বন্দীকে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ নরসিংদী জেলা নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত গারদখানার এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x