ইসমাইল আশরাফ——-
প্রিয় খোকা—
আজ প্রতি পদেপদে উপলব্ধি করছি
কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে নিয়তী
কতটা নির্মম হয় জীবনের পরিনতি,
কতটা বাস্তবতার শীর্ষাসনে দাঁড়িয়ে
বুদ্ধি লোপ পেয়ে
মানুষ- হয়ে যায় বোকা।।
আমার বুকের ধন—
তোর বাবা চলে যাওয়ার সময়
নাক ফুলটা তুলে রেখেছি আলমারীতে
বলিনি সেটা কাউকে,
শাড়ী আর গয়না গুলো উপহার দিয়েছি
গোপণে তোর বউকে,
আমার মৃত্যুর পরে
নাকটা ফুলটা বিক্রি করে-
কিনিস্ কাফনের কাপড়,
হাত পেতে ভিক্ষে করে,
বুকে আর দিস্ না ক্ষত
দিস্ না কোন আঁচড়।।
আমার মানিক সোনা—
তুই হওয়ার সময় – ডাঃ বলেছিল
একজনকে পারবেন বাঁচাতে
মা – না’হয় ছেলে-
আমি মিনতি করেছি বিধাতার কাছে
আমাকে তুলে নাও
নিওনা খোদা ছেলে,
পরম আয়ু দাও – মানিক সোনাকে
দেখুক দুনিয়া
দু’চোখ মেলে,
অতঃপর বেঁচেছি দু’জন
রহমত তাঁর
সেই তুই আজ
আমায় গিয়েছিস ফেলে,
তাই আজ বড় অসহায়
মৃত্যুর দিন গুনছি
যন্ত্রনায় তিলেতিলে।।
আমার বুকের মানিক—
আপদে বিপদে আগলে রেখেছি
কখনো দেইনি কষ্ট,
আজ বুঝেছি বৃথা গেছে সব
তুই হয়েছিস নষ্ট,
বৌ’ মার কথায় রেখেছিস আমায়
একলা বৃদ্ধাশ্রমে
পরাজিত নই- পাথর বেঁধেছি
লড়াই যায়নি থেমে,
নামাজ পড়ে করছি দোয়া
সুখে থাকিস্ বৌ নিয়ে,
আমি আছি খোদার হাওলায়
যাবনা অভিশাপ দিয়ে।।
আমার মানিক যাদু—
আমার জন্য কষ্ট পাইনা
মাঝেমাঝে উঠি কেঁদে
কখনো’বা যাই ঘেমে,
নাতিটাও যদি পড়ে যায় কভু
নাতবৌয়ের প্রেমে,
তুই বুড়ো হলে তোর ছেলে যদি
তোরে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে,
বড় অসহায় হয়ে পড়েছি
দম যায় ক্রমেক্রমে।।
- আমার কলিজার টুকরা—
যত কিছু হোক
তোর জন্য করে যাব শুধু দোয়া,
তুইযে আমার সাত রাজার ধন
বড় কষ্টে পাওয়া,
এগিয়ে যা – বহুদূর যা
ভয় পাস্ নে
আমি আছি তোর মা।।