ভারতকে আলোচনার টেবিলে বসাতে ট্রাম্পই উপযুক্ত বলছে পাকিস্তান
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক ভূমিকা কামনা করেছে পাকিস্তান।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে সংলাপের পথে আনতে ট্রাম্পই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, সাম্প্রতিক চার দিনের সংঘর্ষ ভারত নিয়ন্ত্রিনত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনাটি একটি মিথ্যা পতাকাবাহী অভিযান হিসেবে তুলে ধরেছে।
তিনি দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) সন্দেহাতীতভাবে শান্তি এবং লাভজনক বাণিজ্যের পক্ষে। তিনি উত্তেজনা বৃদ্ধির বিপক্ষে, যুদ্ধ নয় বরং সংলাপের পক্ষপাতী।
তিনি জানান, পাকিস্তান সংযম দেখিয়েছে। ভারতের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে ৩৩ জন পাকিস্তানি নিহত হওয়ার পর আত্মরক্ষায় পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পেহেলগামের হামলা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রমাণ না দেওয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মার্কিন জনগণ ও প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় উষ্ণ হয়ে উঠছে এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব দৃঢ় হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব ট্রাম্পেরই প্রাপ্য।
তিনি বলেন, আমাদের উচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। তিনি অন্তত ১০টি আলাদা উপলক্ষে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং সেই দাবি যথার্থ।
বিলাওয়াল আরও বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে চায়, তবে সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে তা পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ভারতের ভূমিকাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করে তিনি বলেন, নয়াদিল্লিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যখন তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, তখন তারা অন্যদের কীভাবে নিরাপত্তা দেবে? প্রশ্ন তোলেন তিনি। চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের অবস্থানকেও ‘ফাঁপা’ ও ‘ওজনহীন’ বলে বর্ণনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ধারণাটি কার্যকারিতা হারিয়েছে। তার মতে, এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি কেবল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেই সম্ভব।
এর আগে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারত চাইলে পাকিস্তান সবসময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা মরিয়া নই।’ ভারতের রাজনৈতিক বক্তব্য- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ‘এই তো ট্রেলার’ মন্তব্য- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের উসকানিমূলক কথা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে।’
ইসহাক দার বলেন, ‘আমরা শান্তিকামী, অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে মনোযোগী। কিন্তু আমাদের সম্মান, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে আমরা আপসহীন।’
তিনি জানান, ভবিষ্যতের যেকোনো ভারত-পাকিস্তান সংলাপ হতে হবে বিস্তৃত- যেখানে সন্ত্রাসবাদ, জলবণ্টন চুক্তি এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের সমাধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।