আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : রাজশাহীর লক্ষিপুরের বেসরকারি সিডিএম হাসপাতালে ভৌতিক বিল দিয়ে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা না দেয়াসহ সার্ভিস চার্জের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ওষধের অতিরিক্ত দাম নেয়া ও অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও রোগিদের হয়রানীর অভিযোগ করা হয়েছে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগি এক রোগীর ছেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
রাজশাহী নগরীর লক্ষিপুরে চৌধুরী টাওয়ারে অবস্থিত এই হাসপাতাল। এর আগেও এই হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে অযৌক্তিক পরীক্ষা করানো ও রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ উঠে। সর্বশেষ গত ২৫ মে এক রোগীর ছেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর শিরোইল কলোনির বাসিন্দা মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন থেকে কিডনি ও ডায়ালাইসিস সমস্যায় ভূগছেন। হঠাৎ তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতি হলে গত ২০ মে রাত ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সিডিএম হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরদিন ভর্তি ফি, বেড চার্জ, ঔষধের দাম ও সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে একদিনের ২১ হাজার ৫৪৬ টাকা বিল ধরিয় দেয় রোগীর প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেনের হাতে। এসব বিল যাচাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে অন্য তিনজন রোগীর বিলও এর সঙ্গে দেয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি হাসপাতালের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলমকে অবগত করেন। পরে তিনি ৪ হাজার ৩৭৫ টাকা বাদ দিয়ে ১৭ হাজার ১৭১ নেন।
এছাড়াও এই বিলে বাজার কোম্পানীর খুচরা মূল্যের চেয়ে কোন কোন ওষদের দাম দ্বিগুনও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিওপেনাম ইনজেকশনের দাম নেয়া হয়েছে এক হাজার ৩৫০ টাকা। যা ফার্মাসিতে দাম ৯০০ টাকা। আর ক্লোটিনেক্স ৫৭৫ টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা, সোডিপ ইনজেকশন গায়ে লেখা মূল্য ২৫ টাকা থাকলেও দাম নেয়া হয়েছে ১২০ টাকা। মক্সিবাক ৩১০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, রোগীর বেড প্যাকেজ রেট তিন হাজার টাকার হলেও প্রথম দিনের বেড ভাড়া ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং দ্বিতীয় দিনের বেড ভাড়া ৬ হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হয়। এর পরে প্রতিদিন বেড ভাড়া ৪ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। এছাড়াও ওই রোগীর ডায়াবেটিস একদিনে ১০ বার পরীক্ষা দেখিয়ে এক হাজার টাকা বিল নেয়া হয়েছে।
আমির হোসেন বলেন, আমার মা ২০ মে ভর্তি হন। আর রিলিজ নিয়েছেন ২৫ মে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। যেখানে ওষধের দাম অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ভর্তিসহ নানান ভৌতিক বিল তৈরী ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। মোট বিলের সঙ্গে আবার ৭% সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়েছে তার তাদের কাছ থেকে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক থাকার নিয়ম থাকলেও তা ছিল না। কিন্তু চিকিৎসকের সিফটিং সার্জ দেখিয়ে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও বাহির থেকে আসা রোগীর পরিচিত চিকিৎসক ফি না নিলেও তার নামে ভাউচার দিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক হাসন-আল- মারুফ বলেন, ‘সিডিএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অফিসের বিভিন্ন কাজে ব্যবস্ততা থাকায় শুনানি করা সম্ভব হয়নি। আগামী দুই একদিনের মধ্যে নোটিশ করে শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমান হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে সিডিএম হাসপাতালের যোগাযোগ করা হলে একজন ফোন রিসিভ করে নিজের নাম সাজিদ উল্লেখ করে তিনি টেলিফোন অপারেটর পরিচয় দেন। এ সময় হাসপাতালের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোন নম্বর চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন।
তবে তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী বিল-ভাউচার তৈরী ও রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে । কোন ধরনের অনিয়ম করা হয় না। যে রোগীর পক্ষ হতে এসব অভিযোগ তুলা হয়েছে সেই রোগীকে রাতে সেবা প্রদান করা হয়েছে। যা অন্য কোন হাসপাতালে রাতে সেবা পেতেন না। অভিযোগকারী তাদের ভাল সেবার করা কেন বলেন না সে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।