Sunday , 28 April 2024
শিরোনাম

রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাল যৌন নিপীড়নের শিকার জবির মীম

যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শরণাপন্ন হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) নিজের জীবনকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আকুল আর্জি জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদনে মিম লিখেন-

মহামান্য,

আমি আপনার সুনামধন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফিল্স এন্ড টেলিভিশন বিভাগের ৩য় ব্যাচের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। ২০২১ সাথের ডিসেম্বর মাসে উপাচার্য মহোদয় বরাবর আমার সাথে ঘটে যাওয়া বুলিং ও যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে একটি আবেদন দায়ের করি। বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় আমার যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বে ছিলেন। এটার বিচার আমি এখনো পাইনি, উল্টো আমাকে যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক এবং তার সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান, অনার্স পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেইল করিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকেরা আমাকে ভীষণরকম বহিষ্কার ভয়ভীতি, পরীক্ষার ফেইল করানো, অনান্য শিক্ষার্থীদের থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করে, মৃত্যুহুমকি দিয়েই যাচ্ছে, আমাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে আমি নিউজ মিডিয়াতে বিষয়টি প্রকাশ করি।

এমতাবস্থায়, মহামান্য আপনার কাছে সর্বশেষ আশা ভরসা নিয়ে আবেদন জানাচ্ছি। আপনার পক্ষ থেকে আমার এই বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতার ব্যবস্থার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি এবং আমাকে ফেইল করানো বিষয়গুলো আপনার নির্ধারিত বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনঃবিবেচনা পূর্বক আমার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে আমার জীবনটাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আকুল আর্জি জানাচ্ছি।

বিনীত নিবেদক,

কাজী ফারজানা মিম।

 

এর আগে, সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে যান মিম। সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মীম বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করে। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।

তিনি বলেন, আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয়, সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।

এদিকে ডিবি প্রধান হারুন বলেছেন, জবি শিক্ষার্থী মীম সোমবার (১৮ মার্চ) একটি অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে আমাদের সাইবারের একটি টিম কাজ করছে। অভিযোগকারী মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, আমরা জবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসি অনেক কথা বলেছেন, এর অভিযোগের অনেক বিষয়ের অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই।

ডিবি প্রধান হারুন বলেন, প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারবো না, তাকে কেন বার বার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল বা হুমকি দেয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে নিজেদের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা (২৪)। তার বাবা প্রয়াত জামাল উদ্দিন সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। মা তাহমিনা ছিলেন কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।

অবন্তিকার কয়েকজন বন্ধু জানান, তিনি ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্মানের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে আম্মানের পক্ষ নিয়ে তার (ফাইরুজ) সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেছেন।

এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুজনকে গ্রেপ্তারে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করা হয়।

Check Also

মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটিতে মানিকগঞ্জের শাকিল

নাহিদুল ইসলাম হৃদয়, বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x