Friday , 3 May 2024
শিরোনাম

শুরু হল নাযাতের দশক, ক্বদর সন্ধানে ইতিকাফের মাধ্যমে অর্জিত হোক মুমিনের সর্বাঙ্গীন মুক্তি – মাওলানা মোঃ রাহাত উল্লাহ

بسم الله الرحمن الرحيم.
সকল প্রসংশামহান রাব্বুল আলামিনের জন্য, যিনি মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দ্বারা তার বান্দাকে মহিমান্বিত করেছেন। দরুদ ও সালাম তার প্রিয় হাবিবের প্রতি যিনি আগমন না করলে পৃথিবীর কোন কিছুই সৃষ্টি হতোনা।
এখন রামাদানের মধ্যবর্তি সময়, আর কদিন পর শুরু হবে রামাদানের বিশেষ আমল ই’তিকাফ। একদিকে করোনায় বিশ্ব মুখ থুবড়ে পড়েছে অন্যদিকে লকডাউন চলছে দেশ ও জগতব্যাপী।

আমরা প্রথমে জানবো ইতিকাফ কী?

ইতেকাফ বলা হয়, ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। ইতিকাফের উদ্দেশ্যে বিশ রামাদানের সুর্যাস্তের আগে আগেই মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবং ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হবে। রাসূলে আরাবী সা. সারা জীবন রামাদানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এমনকি ওফাতের বছরও ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন।

ইতিকাফ আরবি শব্দ৷ ইতিকাফ শব্দের অর্থ হলো- বসে থাকা, অবস্থান করা,বিশ্রাম করা,সাধনা করা ইত্যাদি। শরয়ী পরিভাষায় যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে নিয়মিত আদায় করা হয়,এমন মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইতিকাফের কথা উল্লেখ করেছেন৷

দিনের বেলায় রোজা ও রাতের বেলায় তারাবি ছাড়াও এ মাসে শেষ দশ দিনের একটি বিশেষ আমল ইতিকাফ। যেখানে মুসল্লীরা সারাদিন মসজিদে উপস্থিত থাকা অত্যাবশকীয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মুসল্লীরা কিভাবে ইতিকাফে বসবেন, বসতে পারবেন কিনা -এ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি।

ইসলামী বিশেষজ্ঞগন দাবি তুলেছেন অন্তত একজনকে ই’তিকাফে পালন করার অনুমতি দেওয়া হোক। তারা বলছেন যেহেতু ই’তিকাফকারী মসজিদে অবস্থান করবে, জনসমাগমে যাবেনা, সুতরাং সংক্রমণের ভয় নেই। তাই মসজিদে অন্তত একজনকে পালন সুযোগ দেওয়া যায়।

ইতিকাফের হুকুম কী?

ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ এমন সুন্নত, যা কিছু মানুষ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।

পুরুষের জন্য মসজিদেই এতেকাফ করতে হবে?

পুরুষের জন্য মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ সহীহ হবে না। পুরুষকে অবশ্যই মসজিদে এসে ইতিকাফ করতে হবে। শুধুমাত্র মহিলারা নিজ নিজ ঘরে যেখানে সাধারন তো নামাজ আদায় করেন, এমন স্থানে ইতিকাফ করতে পারবেন। এটা মহিলাদের জন্য। পুরুষদের জন্য মসজিদ শর্ত। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু পুরুষের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি নেই তাই অপারগতার কারণে ঘরে ইতিকাফ করতে পারবেন।

সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিটি মসজিদে একজন করে ইতিকাফ পালন করার অনুমতি প্রদান করতে পারেন সরকার। ইতিকাফ কারীগণ মসজিদ থেকে বের হন না। তাদেরকে মসজিদে অবস্থান করতে হয়। সুতরাং এতে কোন ঝুঁকি নেই। তাই প্রতিটি মসজিদে অন্তত একজন করে ইতিকাফ পালন করার অনুমতি প্রদান করা যায়।

ইতিকাফের গুরুত্বঃ
ইতিকাফ রমযানের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত৷ আর রমযানের অন্যান্য করনীয় ইবাদাত শেষে একজন রোযাদারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইতিকাফ করা৷ কেননা
রমযানের খায়র-বরকত লাভে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর নসিব হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আর লাইলাতুল কদরের আশায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে রমযানের প্রথম দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ আতপর দ্বিতীয় দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ অতপর স্বপ্নে তাকে জানানো হলো যে,লাইলাতুল কদর শেষ দশকে রয়েছে৷ অতপর তিনি শেষ দশকে ইতিকাফ করার ব্যপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। শুধু তাই নয়! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে প্রতি বৎসর ইতিকাফ করেতেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও ইতিকাফ করতেন৷ আর উম্মতকে তিনি ইতিকাফ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন।
যেমন হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَسَافَرَ عَامًا فَلَمَّا كَانَ مِنْ الْعَامِ الْمُقْبِلِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا.
হযরত উবাই বিন কা’ব রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমাদানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তবে তিনি কোন এক বছর রমযানে সফরে অতিবাহিত করেন। এরপর পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন। হাদীসের সনদ সহীহ৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৭০, সুনানে আবূ দাউদ ২৪৬৩, সুনানে তিরমিযী ৮০৩, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ২২২৭, মুসনাদে আহমাদ ২০৭৭০, মুসতাদারাকে হাকীম ১৬০১,মিশকাতুল মাসাবীহ ২১০২,)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتّٰى تَوَفَّاهُ اللّٰهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُه مِنْ بَعْدِه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেনঃ হযরত নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময়ই রমযান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। হাদীসের সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ২০২৬, সহীহু মুসলিম ১১৭২, সুনানে আবূ দাঊদ ২৪৬২, সুনানে তিরমিযী ৭৯০, মুসনাদে আহমাদ ২৪৬১৩, মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৯৭)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ
كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ বলেছেনঃ হযরত
জিবরীল প্রতি বছর হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনালেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। হাদীসের সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ৪৯৯৮,২০৪৪ হাদীস৷
সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৬৯ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাউদ ২৪৬৬ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৭৯০ হাদীস৷ সুনানে দারেমী ১৭৭৯ হাদীস৷
মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬, ৮২৩০, ৮৪৪৮, ৮৯৫৯, ২৪৮৩০ হাদীস৷)

ইতিকাফের শর্তসমূহঃ
১৷ মুসলিম হওয়া৷
২৷ বালিগ বা বালিগা হওয়া৷
৩৷ সুস্থ-মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া৷
৪৷ ইতিকাফের নিয়ত করা৷
৫৷ মাসজিদে ইতিকাফ করা৷
৬৷ মাসজিদে নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করা৷
৭৷ রোযা অবস্থায় ইতিকাফ করা৷
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১০ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২৮৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৬৫ পৃষ্ঠা৷)

ইতিকাফ তিন প্রকারঃ
১৷ ওয়াজিব ইতিকাফ৷ তথা-মান্নতের ইতিকাফ৷
২৷ সুন্নত ইতিকাফ৷ তথা-রমযান মাসের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ৷
৩৷ নফল ইতিকাফ৷ তথা-যে কোন দিন বা যে কোন সময়ের ইতিকাফ৷ তবে নফল ইতিকাফ এক মুহুর্তও হতে পারে৷
(সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৭২,১৭৬৯ হাদীস৷ শরহে বুখারী নাসরুল বারী ৫/৬৪৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ৫/২১৭ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১৪৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা৷)

ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো-মসজিদে হারাম বা বাইতুল্লাহ৷ তারপর মাসজিদে নববী৷ তারপর মসজিদুল আকসা৷ তারপর মসজিদুল জুমুআ৷ তারপর মসজিদে পাঞ্জেগানা৷ আর মহিলাদের জন্য ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো- ঘরের অন্দর মহল৷ (আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল হাদীস ৬৫২ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৮ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/২১৩ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১৪৬ পৃষ্ঠা৷ আনওয়ারুল মিশকাত ৩/৩৭৮ পৃষ্ঠা৷)

সুন্নত ইতিকাফঃ
রামাদান মাসের শেষ দশদিন মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ আলাল কিফায়া৷ অর্থাৎ মহল্লার দু’একজন লোক ইতিকাফ করলেই সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে৷ আর যদি মহল্লার একজন লোকও ইতিকাফ না করে,তবে মহল্লার সকলেই সুন্নাত তরকের গুনাহগার হবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০২৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/৪৩০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ৩/৩০২ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

অনেক এলাকায় এরুপ প্রচলন রয়েছে যে,শুধু রামাদানের শেষের তিনদিন ইতিকাফ করে৷ এতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ইতিকাফ আদায় হবেনা৷ বরং তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গন্য হবে৷ আর উক্ত অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারনে মহল্লার সকলেই গুনাহগার হবে৷ (মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬ হাদীস৷
ইমদাদুল ফতোয়া ১/১৫৪ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

রামাদানের বিশ রোযার দিন সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ইতিকাফের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করা এবং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফে বহাল থাকা জরুরী৷ তবে সূর্যাস্তের পুর্বেই যদি ঈদের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফে অবস্থান করা জরুরী৷ (আনওয়ারুল মিশকাত ৩/৩৭২ পৃষ্ঠা৷ শরহে বুখারী নাসরুল বারী ৫/৬৪৩ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/২১৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৬৬ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

বিনিময় দিয়ে বা বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো জায়েয হবেনা৷ কেননা ইতিকাফ হলো-খালিস একটি ইবাদাত৷ আর ইবাদাতের বিনিময় দেয়া বা নেয়া জায়েয নেই৷ তবে রিয়েল হাদিয়ার বিষয়টি ভিন্ন ব্যপার৷ (ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া ২/৩২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে রহমানিয়া ১/৪৫৮ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

ইতিকাফকারীর করনীয়ঃ
১৷ অধিক পরিমাণে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা৷
২৷ অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা৷
৩৷ অধিক পরিমাণে তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা৷
৪৷ অধিক পরিমাণে তাওবা ইস্তিফফার করা৷
৫৷ অধিক পরিমানে নফল নামায আদায় করা৷
৬৷ সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন থাকা৷
৭৷ ইলমে দ্বীন চর্চা করা৷
৮৷ দ্বীনি কিতাবাদী মুতালায়া করা
৯৷ তাফসীর ও ফিকাহর কিতাবাদী লেখা৷
১০৷ ফতোয়া ও মাসআলা মাসায়িল রিসার্চ করা৷
(শরহে বুখারী নাসরুল বারী ৫/৬৪৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৬৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৭ পৃষ্ঠা৷)

ইতিকাফ ভঙ্গের কারনসমূহঃ
১৷ স্ত্রী সহবাস করলে৷
২৷ খাহেশাতসহ স্ত্রীকে আদর-সোহাগ করলে৷
৩৷ প্রয়োজন ব্যতীত মাসজিদ থেকে বের হলে৷
৪৷ ভুলে মাসজিদ থেকে বের হলে৷
৫৷ জোর পুর্বক কেউ মাসজিদ থেকে বের করে দিলে৷
৬৷ রোগীর সেবার জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
৭৷ জানাযা আদায়ের জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
৮৷ ফরয নয় এমন গোসলের জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
(সুনানে আবূ দাঊদ ২৪৭৩ হাদীস৷ সুনানুল কুবরা-বায়হাকী ৮৫৯৪ হাদীস৷ মিশকাতুল মাসাবীহ ২১০৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১২-৫১৩ পৃষ্ঠা৷ আল ফিকহুল মুয়াসসার ২২৫ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৭ পৃষ্ঠা৷)

ইতিকাফের কাযাঃ
রামাদানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা অবস্থায় যদি কোন দিনের ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়,তবে শুধু সে দিনের ইতিকাফ কাযা করা জরুরী হবে৷ অর্থাৎ কারো একদিনের ইতিকাফ ভঙ্গ হয়েছে, এমতাবস্থায় সে যেদিন কাযা আদায় করবে, সেদিন সূর্যাস্তের পুর্ব থেকে পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযাসহ মাসজিদে ইতিকাফ করতে হবে৷
উল্লেখ- শুধু ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফের কাযা করতে হয়৷ নফল ইতিকাফের কোন কাযা করতে হয়না৷ (সহীহুল বুখারী ২০৪১ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/৪৪৪ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮২ পৃষ্ঠা৷ ফাতহুল কাদীর ২/৩০৮ পৃষ্ঠা৷)

মান্নতের ইতিকাফঃ
কেহ যদি মান্নত করে যে,মসজিদে হারামে বা মসজিদে নববীতে কিংবা মসজিদুল আকসায় অথবা অন্য কোন মসজিদে ইতিকাফ করবো, তবে যে কোন মসজিদে ইতিকাফ করলেই মান্নত পুরা হয়ে যাবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০৩২ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ২৪৭৪ হাদীস৷
ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১৬ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৬ পৃষ্ঠা৷)

কেহ যদি একমাস ইতিকাফ করার মান্নত করে মৃত্যু বরন করে,তবে প্রতি দিনের ইতিকাফের জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ খাদ্য বা মূল্য মিসকিনকে দেয়া ওয়াজিব হবে৷ তবে কেহ যদি অসুস্থ অবস্থায় মান্নত করে যে,যদি সুস্থ হই তবে একমাস ইতিকাফ করবো,কিন্তু সুস্থ হওয়ার পুর্বেই সে মারা গেল,তাহলে কিছুই করতে হবেনা৷ আর কারো জিম্মায় ইতিকাফের কাযা থাকলে মৃত্যুর পুর্বেই অসিয়ত করে যাওয়াও ওয়াজিব হবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০৪৩ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১৬-৫১৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৪৪ পৃষ্ঠা৷)

পরিশেষে মহান রবের কাছে ফরিয়াদ জানাই এ মহাবিশ্ব হতে সকল দুর্যোগমুক্ত করে বান্দা হিসেবে আমাদের সকল ইবাদাত রামাদান, সিয়াম, তারাভী,তাহাজ্জুদ, সাহরি,ইফতার, তিলওয়াত,তাসবিহ,তাহলিল,ইতিকাফ, লাইলাতুল কদর,রাহমাত, বারাকাত, মাগফিরাত ও সকল নেক আমল কবুল করুন।
সকলকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

হাফিয মাওলানা মুহাম্মদ রাহাত উল্লাহ
সহকারী শিক্ষক
উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
[email protected]

Check Also

নরসিংদীতে গারদে আটক বন্দীকে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ নরসিংদী জেলা নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত গারদখানার এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x