Sunday , 12 May 2024
শিরোনাম

স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি ঘিরে গোদাগাড়ীতে উত্তরাঞ্জলের খ্রীষ্টান ধর্মালম্বীদের মিলন মেলা

রাজশাহী প্রতিনিধি ;-
কেউ এসেছেন বাসে চড়ে, কেউ ভুটভুটিতে, কেউ মাইক্রোবাসে, কেউ মোটরসাইকেলে বা বাইসাকেলে। আবার কেউ এসেছেন পায়ে হেঁটে দূর-দূরান্তা থেকে খ্রীষ্টান ধর্মপ্রাণ নানা বয়সী নারী-পুরুষ থেকে শিশু-কিশোররা ছুটে এসেছেন গোদাগাড়ীর নবাই বটখলা এলাকায়।
এই গ্রামের মাঝে রয়েছে মারিয়া গীর্জা। সেই গীর্জাকে ঘিরেই প্রতিবছর ১৬ জানুয়ারি মহাতীর্থোৎসব পালন করেন খ্রীষ্টান ধর্মবলাম্বি মানুষরা। এই গীর্জার ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের মর্মস্পর্ষি একটি কাহিনী।
১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী এই গ্রামের শতাধিক খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে ধরে ব্রাশফায়ারে হত্যার উদ্দেশ্যে বিলের মাঝে জড়ো করে। এসময় ওই গ্রামের নারীরা মাটির তৈরী মারিয়া গীর্জায় প্রার্থনা শুরু করেন। একপর্যায়ে হঠাৎ করে একটি বিকট শব্দ হলে পাকা সেনারা মুক্তি বাহিনীর আক্রমণ করেছেন মনে করে ধরে আনা পুরুষদের ফেলে রেখে পালিয়ে যান। এতে প্রাণে বেঁচে যান ওই পুরুষরা।
তখন থেকেই খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে বিশ্বাস জন্ম নেয় যীশু খ্রিস্ট্রের মা মারিয়ামের কাছে প্রার্থনার জন্যই বেঁচে যান ওই পুরুষরা।
এর পর থেকে প্রতি বছর দিবষটি উপলক্ষে রক্ষাকারিনী মা মারিয়ার তীর্থোৎসব পালন করেন খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা। তবে নভেম্বর মাসে ধানকাটাসহ এ অঞ্চলের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের গরিব মানুষরা ব্যস্ত থাকেন বলে ওই ঘটনাকে সামনে রেখেই একটু পিছিয়ে ১৬ জানুয়ারি পালন করা হয় দিবসটি। স্বাধীনতার ইতিহাসকে কেন্দ্র করে দেশের ইতিহাসে এমন আয়োজন বিরল। কেবল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নবাই বটখলা গ্রামেই প্রতি বছর এমন আয়োজন করা হয়।

১৬ জানুয়ারি সরেজমিন মিলন মেলা স্থান ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, রংপুরসহ বৃহত্তর উতরাঞ্চল থেকে এ সম্প্রদায়ের হাজারও মানুষ ছুটে আসেন তাঁদের বিশেষ প্রার্থনার জন্য। একসঙ্গে অন্তত ১০ হাজার মানুষ সকাল ৮ থেকে ১০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ প্রার্থনায় অংশ নেন। সব শ্রেণির নারী-পুরুষরা এতে অংশ নেন। এসময় তারা নিজেদের এবং দেশ ও জাতী সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেন। প্রার্থনার পরে যুবক-যুবতিরা বিয়ের পিঁড়িতেও বসেন। আবার নিজেদের মঙ্গলের জন্য এখানে মানতও করেন কেউ কেউ। আগে মাটির তৈরী হলেও মারিয়া গীর্জাটি এখন পাকা করা হয়েছে।

দিবসটি ঘিরে এখানে বসে মেলা। এতে বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠে। একদিনের এ মেলায় জিলাপী, বাতাসা, বিভিন্ন ফল, হাতের তৈরী তৈজসপত্রসহ গ্রামীণ নানা জিনিসপত্র বিক্রি হয়।

সিরাজগঞ্জের আভে মারিয়া গীর্জার সিস্টার স্লটি দ্যা বলেন, ‘আমারা সিরাজগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে করে ১০ জন এসেছি এখানে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে। আামদের মতো বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত মানুষ এসেছেন। আমরা সবাই সকালে প্রার্থনা করেছি মা মারিয়ার কাছে। ১৯৭১ সালে যেভাবে এ এলাকার পুরুষদের রক্ষা করেছেন মা মারিয়া এখনো তিনি আমাদের রক্ষা করবেন বিপদে-আপদে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে আাসা জয় টুডু নামের একজন বলেন, আমরা বাসে চড়ে এসেছি এ প্রার্থনায় অংশ নিতে। এখানে প্রতিবছর আশি। মনের আশাগুলোকে মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনায় বলি।’

রাজশাহীর বিশপ গার্ভেস রোজারিও বলেন, ‘১৯৭ সালের ৮ নভেম্বরকে কেন্দ্র করেই মূলত আমরা দিবসটি পালন করি। তবে ৮ নভেম্বর এ অঞ্চলের খ্রীষ্টানরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রতি বছর ১৬ জানুয়ারি পালন করা হয় দিবসটি। এবার অন্তত ১২ হাজার মানুষ এসেছেন বিশেষ এ প্রার্থনায় অংশ নিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রামের নারীদের বিশেষ প্রার্থনার কারণে বিকটএকটি শব্দে হানাদার বাহিনীর হাতে আটক গ্রামের সব পুরুষ জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। মারিয়া গীর্জায় গ্রামের নারাীরা যে প্রার্থনা করেছেন, তাতেই হয়তো বেঁচে গেছেন ওই পুরুষরা। সেই বিশ্বাস থেকে এখনো দিবসটিকে ঘিরে আমরা বিশেষ প্রার্থনা করি। যা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকেন্দ্রীকত এমন আয়োজন কোথাও হয় বলে জানা নাই।’

ওই এলাকার দেউপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন সোহেল বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ওই ঘটনাকে সামনে রেখেই খ্রীষ্ট্রান ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার মানুষ একদিনের জন্য এখানে ছুটে আসেন প্রতি বছর। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দিতবসিট উপলক্ষে মেলাবসে। সেটিওএকদিনের জন্য। মেলায় বিশেষ তেমনকিছু থাকে না। তবে খ্রীষ্টানরা আসেন মূলত প্রার্থনার জন্য। এতে তাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

Check Also

ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ

বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি (বিডিপিপি) নামের নতুন এক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। শনিবার (১১ মে) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x